একাদশ সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের ঝড় ওঠেছে। মন্ত্রিত্ব পেলে মেনন নির্বাচন নিয়ে ‘বিরূপ’ মন্তব্য করতেন কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অন্যদিকে, তার উপলদ্ধির জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন।
এ প্রসঙ্গে যমুনা নিউজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে রাশেদ খান মেনন বলেন, আমি কেবল বিগত নির্বাচনের কথা বলিনি, আমি সমগ্র স্বাধীনতা-উত্তর কাল থেকে শুরু করে বিএনপি জামাতের অধীনে হওয়া নির্বাচন সবগুলো সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে বিগত নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছি। আমার দু’লাইন বক্তব্য উদ্ধৃত করলে তো বিষয়টা সঠিক হবে না, এটি ধারাবাহিকভাবে দেখা প্রয়োজন।
বিগত নির্বাচন সফলভাবেই সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু অভিজ্ঞতা সবক্ষেত্রে সুখকর নয়। এটা আমি তখনই বলেছিলাম এবং বলেছিলাম বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করেছিল এবং তারা এটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে। সেখানে কতিপয় ব্যক্তির বাড়াবাড়ি জনগণকে ক্ষুণ্ন করেছে। আমি বলেছিলাম আজকে, মানুষ ক্রমাগত নির্বাচন থেকে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। স্বাভাবিকভাবে সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে উৎসাহব্যঞ্জকভাবে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে অনেকে হয়তো ভোট দিতে যাবেন, কিন্তু ভোট দিতে পারেননি। এটাতো তখনও বলেছি আমরা, আপনারা বলেছেন, মিডিয়া বলেছে। আমরা ২০০৮ সালেও নির্বাচন করেছি, সেখানে উৎসব ছিল। বিগত নির্বাচনটা উৎসবমুখর ছিল না।
মানুষ নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে উল্লেখ করে মেনন বলেন, নির্বাচনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। এটা উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদসহ সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের দেশের মানুষ ভোটকে মূল্যবান মনে করে, উৎসব হিসেবে নেয়, তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন ভণ্ডুল করার চেষ্টা করেছিল। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল, কিন্তু প্রার্থী দেয়নি ঠিকমতো। ঢাকায় মির্জা আব্বাস ছাড়া সে অর্থে কোনো পরিচিত প্রার্থী ছিল না তাদের।
মন্ত্রিত্ব পাননি সেজন্য এমন ‘বিরূপ’ মন্তব্য কিনা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এমন প্রশ্নের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মেনন বলেন, আমিতো পার্লামেন্টে এ নিয়ে বলেছি। মন্ত্রিত্ব নিয়ে আমাদের ক্ষোভ প্রত্যাশা কিছু নেই। আমাকে ২০১২ সালে মন্ত্রিত্ব অফার করা হয়েছিল। আমাদের পার্টির সিদ্ধান্তে সেটি গ্রহণ করিনি। আবার যখন রাজনৈতিক সংকট চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল হেফাজত, জামাত, বিএনপির অবরোধ, সেসময় আমরা সেই নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দিয়েছিলাম। কারণ আমরা সেটি দরকারি মনে করেছিলাম। পরবর্তীকালে এর ধারাবাহিকতায় মন্ত্রিত্বে ছিলাম।
মন্ত্রিত্ব না থাকা প্রসঙ্গে মেননের পাল্টা প্রশ্ন, এখন মন্ত্রী নেই, তাতে কি আমার ক্ষতি হচ্ছে খুব? আমিতো রাজনীতি করা লোক। এই সরকারের আমাদের সবার সংগ্রামের ফসল, এই উপলব্ধি থাকলে বোধহয় অনেক ভালো হতো।
তার বক্তব্যে ১৪ দলে একটা ভুল বার্তা গেলেও সেটি অচিরেই মিটে যাবে বলে মনে করেন মেনন।
এর আগে, গতকাল শনিবার দুপুরে বরিশাল নগরীর টাউন হলে ওয়ার্কার্স পার্টির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমিও নির্বাচিত হয়েছি। তারপরও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এমনকি পরবর্তীতে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ।’
তিনি আরও বলেন, আজ দেশের মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে সরকার। সরকার দেশকে উন্নয়নের রোল মডেল করেছে, দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু উন্নয়নের নামে দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে। উন্নয়নের নামে আজ দেশের মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে সরকার। তাই কেউ মুখ খুলে মত প্রকাশ করতে পারে না।
Leave a reply