তরিকুল ইসলাম হিমেল, ফরিদপুর
পলিথিন ও প্লাস্টিক পুড়িয়ে পেট্রোল-অকটেন এর মত জ্বালানি তেল উৎপাদন করছে ফরিদপুরের কানাইপুরের অটোরিক্সা মেকানিক সোহাগ হাওলাদার। উৎপাদিত তেল মোটর সাইকেলে ব্যবহার করছেন স্থানীয় উৎসুকরা। যত্রযত্র পড়ে থাকা অব্যবহৃত পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করায় পরিচ্ছন্ন হচ্ছে এলাকার পরিবেশও। অনুমোদনসহ সরকারি সহয়তা দেওয়া হলে সম্ভাবনাময় এ প্রকল্প ভূমিকা রাখতে পারে জাতীয় অর্থনীতিতেও এমনটাই বলছেন বিজ্ঞজনেরা।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সনদ নেই সোহাগের, রয়েছে কারিগরি প্রশিক্ষণ। পলিথিন পুড়িয়ে বাষ্প করে সেখান থেকে তেল উৎপাদনের ধারনাটি তার কাছে পুরোনো। নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে শুরু করেন পলিথিন থেকে তেল উৎপাদনের কাজ। শুরুতে তার এ কার্যক্রম অন্যদের হাসির খোরাক যোগালেও নিজের উৎপাদিত তেল দিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে তাক লাগিয়েছেন সকলকে।
সরজমিনে দেখা যায়, একটি বড় স্টিলের ড্রামে পলিথিন ঢুকিয়ে ড্রামের মুখ বন্ধ করার পর আগুনের তাপ দেওয়া হচ্ছে ড্রামের নিচে। তাপে ভেতরের পলিথিন গলে তৈরি হচ্ছে বাষ্প। সেই বাষ্প পানিতে ডুবিতে রাখা একটি পাইপ দিয়ে চলে যাচ্ছে ছোট দুটি এয়ার টাইড পাত্রে। সেখানেই বাষ্প থেকে জমছে তেল। এয়ার টাইড ওই দুটি পাত্রের অপর প্রান্তে রয়েছে আরেকটি মুখ খোলা পাইপ। সেখান দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে গ্যাস। এই গ্যাসও সহায়তা করছে আগুন জ্বালাতে।
সোহাগ জানান, কাঁচামাল হিসেবে সংগ্রহ হচ্ছে ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া পলিথিন। বিস্কুট, কেক, রুটি এ ধরনের বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রীর ফেলে দেওয়া পলিপ্যাকেটসহ পাতলা পলিথিনের বাজারের ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে এ কাজে। ক্ষেত্রবিশেষ ভাঙ্গাড়ির দোকান থেকেও কিনে নিচ্ছেন পলিথিন। ৮ কেজি পলিথিন থেকে উৎপাদন হয়েছে ৭ লিটার পেট্রোল। উৎপাদিত এ তেল ব্যবহার হচ্ছে সোহাগ হাওলাদারসহ স্থানীয় অনেকের মোটর সাইকেলেই।
স্কুল শিক্ষক জাহিদুর রহমান বলেন, পচনশীল না হওয়ায় পলিথিন ক্ষতি করছে মাটির। ফসলী জমিতে পলিথিন জমে থাকায় উৎপাদন কমছে ফসলের। ড্রেন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার ফলে সৃষ্টি হয় রোগ জীবানুর। সোহাগের মত অন্যরাও যদি এ কাজে এগিয়ে আসে তাহতে কমবে পরিবেশ দুষণকারী পলিথিনের সংখ্যা।
তিনি বলেন, বয়লারে তাপ দেওয়ার পর পলিথিন থেকে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেনসহ তৈরি হওয়া গ্যাস সংরক্ষণ করা গেলে ব্যবহার করা যাবে গৃহস্থালীর জ্বালানি কাজেও।
কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, সোহাগের এ উদ্যোগটি অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। এতে করে একদিকে যেমন পলিথিন এর ক্ষতি থেকে বাঁচবে পরিবেশ অন্যদিকে প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের ঘাটতি কিছুটা হলেও কমাবে তার এ উদ্যোগ।
তিনি বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সোহাগের মত এমন উদ্ভাবক ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু তারা মূল্যায়িত হচ্ছে না। বড় পরিসরে এ কাজটি করতে সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। তাই এইসব উদ্ভাবকদেরকে সহজে অনুমোদন, বৈজ্ঞানিক পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হলে সম্ভাবনাময় এ প্রকল্প ভূমিকা রাখবে জাতীয় অর্থনীতিতে- এমনটিই মনে করেন তিনি।
Leave a reply