সৌদি আরবে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়ে ভিডিওবার্তা পাঠানো সেই গৃহকর্মী হুসনা আক্তার (২৫) অবশেষে দেশে ফিরেছেন।
বুধবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি-৮০৪ ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।
এরপর তাকে প্রবাসীকল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে হবিগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তায়। এর আগে স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয় ফ্লাইটটি।
হোসনা আক্তারের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার আজমিরিগঞ্জ উপজেলায়। তার বাবার নাম মো. মুজিবুর রহমান। সৌদি আরব থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়ে কয়েক দিন আগে ভিডিও বার্তা দেন হোসনা। স্ত্রীকে নিরাপদে দেশে ফেরত আনতে পরে সরকারের কাছে আকুতি জানান তার স্বামী শফিউল্লাহ।
এর আগে মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলামের পাঠানো ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গৃহকর্মী হুসনা আক্তার পুলিশের নজরদারিতে বর্তমানে নিরাপদে আছেন। তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেটের উদ্যোগে উদ্ধারের পর সেফ হোমে রাখা হয়েছে। তাকে বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেটের লেবার উইংয়ের কর্মকর্তা কে এম সালাহউদ্দিন সোমবার রাতে এক বার্তায় জানান, হুসনার এখন নিরাপদে রয়েছেন বলে টেলিফোনে জানিয়েছেন। তিনি এখন নাজারান শহরে সেইফ হোমে পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন।
তাকে সেখান থেকে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে বলে জানান লেবার উইংয়ের এই কর্মকর্তা।
হুসনা আক্তার হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা।
ভিডিওবার্তায় হুসনা আক্তার বলেন, ‘আমি হুসনা আক্তার। আমার দালালে ভালা কথা কইয়া-কামের কথা কইয়া আমারে পাঠাইছে সৌদি। নিজরাল (নাজরান) এলাকায় আমি কাজ করি। আমি আইসা দেখি ভালা না। আমার সাথে ভালা ব্যবহার করে না ওরা। ওরা আমার উপর অত্যাচার করে।
আমি বাক্কা দিন (১০/১২ দিন) হইছে আছি। এখন এরার অত্যাচার আমি সহ্য করতে পারি না দেইক্কা কইছি আমি যাইমু গা। এই কথা বলায় ওরা আরও বেশি অত্যাচার করে। আমি এজেন্সির অফিসে ফোন দিছি। অফিসের এরা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আর পারতাছি না। তোমরা যেভাবে পারো আমারে তোমরা বাঁচাও। এরা আমারে বাংলাদেশ পাঠাইতো চায় না। এরা আমারে ইতা করতাছে। অনেক অত্যাচার করতাছে। আমারে ভালা কামের (কাজের) কথা কইয়া পাঠাইছে দালালে। আমারে ইতা করতাছে ওরা। আমি আর পারতাছি না সহ্য করতাম। তোমরা যেভাবে পারো আমারে নেও।’
জানা গেছে, হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের হুসনা আক্তার আর্থিক সচ্ছলতার জন্য গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে ১৭ দিন আগে একটি এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরব যান। সেখানে গৃহকর্তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রথমে স্বামী শফিউল্লাকে ভিডিও বার্তা পাঠান।
হুসনার স্বামী ওই এজেন্সিতে গিয়ে এসব কথা জানালে এজেন্সির সংশ্লিষ্টরা তার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন এবং হুসনা সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
আর্থিকভাবে অসচ্ছল শফিউল্লা কোনো উপায় না পেয়ে স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য ওই ভিডিও তার এক ভাইয়ের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করান।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, নির্যাতনের শিকার নারীর নাম ঠিকানা ও সৌদিতে কোন জায়গায় আছেন সেটা আমাকে জানাতে হবে। তখন আমি মন্ত্রণালয়ে কথা বলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।
আর আগে সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে ফেসবুকে জীবন বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে ভিডিওবার্তা পাঠিয়েছিলেন পঞ্চগড়ের গৃহবধূ সুমি আক্তার।
তার ওই আকুতির ভিডিও ভাইরাল হলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরে চলতি মাসের ১৫ তারিখ সকালে তিনি বাংলাদেশে ফেরেন।
Leave a reply