ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় মসজিদের দানের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষের প্রায় তিনশ শতক জমিতে রোপণ করা রবিশস্য মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের পরমানন্দপুর গ্রামের বকশিপাড়া এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। ওই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।
জানা গেছে, জেলার সরাইল উপজেলার পরমানন্দপুর গ্রামের পূর্বপাড়া জামে মসজিদ ও হাফিজিয়া মাদরাসার দানের টাকা নিয়ে কমিটির দুই পক্ষের বিরোধ চলছিল। মসজিদ ও মাদরাসার পৃথক দুইটি কমিটি রয়েছে। গত তিন বছর আগে ১১ সদস্যের মসজিদ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামানের কাছে মসজিদের দানের টাকা গচ্ছিত ছিল। গত তিন বছরে দান মারফত মসজিদ ও মাদরাসায় প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা জমা হয়। মসজিদ কমিটির অন্য সদস্যরা দানের টাকা ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করে জমা রাখার জন্য বললেও নুরুজ্জামান তাতে কর্ণপাত করেননি। আর তাতে প্রশ্রয় দেন গ্রামের আরেক বাসিন্দা নূর আলী। এ নিয়ে মসজিদ কমিটির অন্য সদ্যস্য ও সাধারণ মুসল্লিদের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
মাদরাসা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ব্যাংকে অ্যকাউন্ট করে টাকা জমা দেয়ার কথা বললে সেই বিরোধ আরও চরম আকার ধারণ করে। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য সালিশ বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এ নিয়ে সর্বশেষ গত নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সালিশ বৈঠক ডাকেন অরুয়াইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ সাদী। ওই সালিশ বৈঠকে নুরুজ্জামান টাকা ফিরিয়ে দেবেন বলে জানান। পরে ১০ নভেম্বর তিনি টাকা ফেরত দেন। কিন্তু টাকা ফেরত দিলেও নুরুজ্জামান, নূর আলী ও তার ভাতিজা বাবুল মিয়া আক্রোশ পেষণ করতে থাকেন। গত কয়েকদিন জয়নাল আবেদীনের সমর্থকরা গ্রামের পূর্বপাড়া খেলার মাঠে ক্রিকেট খেলতে গেলে নূর আলীর ভাতিজা বাবুল মিয়া বাধা দেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ এবং হাতাহাতি হয়। এ ঘটনায় বাবুল আহত হন। এর জের ধরে রোববার বিকেলে জয়নাল আবেদীনের সমর্থকদের কয়েকজন ছেলে গ্রামের একটি কবরস্থান জিয়ারতে গেলে বাবুল মিয়া ও তার লোকজন ওই ছেলেদের ওপর হামলা করেন। এ নিয়ে গ্রামের বকশিপাড়া এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হন। সংঘর্ষের সময় জয়নাল আবেদীনের সমর্থকদের প্রায় তিনশ শতক জমিতে রোপণ করা আলু, পেঁয়াজ, মরিচ, ধনেপাতাসহ বিভিন্ন রবিশস্য মাটিতে মিশিয়ে দেয় নূর আলী ও বাবুল মিয়ার সমর্থকরা। তফসির মিয়া নামে এক কৃষক জানান, বাড়ির পাশে কয়েক কানি জমিতে আমরা শতাধিক পরিবার রবিশস্য রোপণ করেছিলাম। সংঘর্ষের ঘটনায় আমাদের ওই শস্য ক্ষেত মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে আমাদের কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বশির খান নামে আরেক কৃষক জানান, অনেক টাকা খরচ করে ১০-১৫ দিন আগে পেঁয়াজের বীজ রোপণ করেছিলাম। অনেক পরিশ্রম করে ক্ষেতের পরিচর্যা করে এখন এক সংঘর্ষের ঘটনায় সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
মাদরাসা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জানান, আমরা স্বচ্ছতার সাথে মসজিদ-মাদরাসার কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করতে বলেছিলাম। এই নিয়েই বিরোধ তৈরি হয়। এলাকায় এমন কোনো অপকর্ম নেই নূর আলী ও তার ভাতিজা বাবুল মিয়া করেন না। তাদের অত্যাচারে
এলাকার লোকজন অতিষ্ঠ। আমরা এই হামলার ঘটনায় মামলা নিয়ে থানায় গেলে পুলিশ আমাদের মামলা নেয়নি। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
তবে এ ব্যাপারে নূর আলী ও বাবুল মিয়ার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এদিকে ঘটনার পর থেকে সরাইল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন টিটু পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ উঠেছে। জেলা শহরের এক মামলাবাজ আইনজীবীর সাথে আঁতাত করে স্থানীয়দের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ঘটনার পর সোমবার বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন, জেলা পুলিশে সরাইল সার্কেলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মকবুল হোসেন ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছেন।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে সরাইল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহাদাত হোসেন বলেন, যেহেতু দুই পক্ষ মারামারি করেছে তাই আমরা কোনো পক্ষেরই মামলা নিচ্ছি না। তবে পুলিশ আহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা হবে। সেই মামলায় সাধারণ মানুষকে আসামি করা হবে না। যারা এলাকায় দাঙ্গা বাধায় তাদেরকে আসামি করা হবে।
এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আসছি। উভয়পক্ষে সাথে কথা ভলেছি। বিষয়টি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে নিরুপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে বলে জানান তিনি।
Leave a reply