ফলাফলে ফেল, ট্রান্সক্রিপ্টে পাশ!

|

বরগুনা প্রতিনিধিঃ
পরীক্ষার ফলাফলের দিন মোবাইল এসএমএস ও ওয়েবসাইটে দেখা যায় বিজ্ঞানের তিন বিষয় অকৃতকার্য, পুনরায় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করতে গিয়ে দেখে সব বিষয় কৃতকার্য। হারিয়ে গেছে শিক্ষা জীবন থেকে একটি বছর। এমন অদ্ভুত কাণ্ড ঘটেছে বরগুনা সরকারি কলেজের ছাত্রী তাহিরা খানের ক্ষেত্রে।

বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ফল বিভ্রাটের কারণে মেধাবী এক ছাত্রীর শিক্ষা জীবন থেকে হারিয়ে গেছে একটি বছর। বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ২০১৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ওই ছাত্রীর ফলাফলে বিজ্ঞানের তিনটি বিষয় অকৃতকার্য দেখানো হয়। পুনরায় পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য ফরম পুরণ করতে গেলে একাডেমিক ট্রান্সিক্রিপ্ট তুলতে গিয়ে দেখে সে কোন বিষয় অকৃতকার্য হয়নি।

২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তাহিরা খান, বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসএসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। গত ১৭ জুলাই প্রকাশিত ফলাফলে মোবাইল এসএমএস ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দেখতে পান তিনি বিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিতে অকৃতকার্য হয়েছে। এসএসসি পরীক্ষায়ও ভালো ফলাফল অর্জন করা ছাত্রী তাহিরা এমন অপ্রত্যাশিত ফলাফলে মানসিকভাবে পুরোপুরি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।

তাহিরা পাথরঘাটা তাসলিমা মেমোরিয়াল একাডেমি থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৮২ পেয়ে ঢাকার মাইলস্টোন কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। পরে পাঠদানরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে মাইলস্টোন হতে নিজ জেলা বরগুনা সরকারি কলেজে বদলী করে আনেন তার পরিবার। চরম অপ্রত্যাশিত ফলাফলে এতটাই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন যে তিনটি বিষয় ফেল না হয়ে যদি একটি বিষয়ে সমস্যা হতো ফলাফল পুনঃগননার আবেদন করতো, তিনটি বিষয় ফেল দেখানোর কারণে তা সম্ভব হয়নি।

পরবর্তীতে পারিবারিক উৎসাহে মানসিক যন্ত্রনা ও সামাজিক বঞ্চনা কাটিয়ে পুনরায় পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে তাহিরা । পুনরায় পরীক্ষায় অংশ নিতে ১৭ ডিসেম্বর ফরম পুরণ করার জন্য বরগুনা সরকারি কলেজে গেলে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট তুলে দেখে সকল বিষয়েই কৃতকার্য হয়ে জিপিএ ৩.৮৩ পেয়েছেন। এসএসসি ও এইচএসসি সম্মিলিত ফলাফলের ভিত্তিতে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারতেন। তথ্য প্রযুক্তির যুগে এমন ভুল কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা তাহিরা।

তাহিরার মা সেলীনা খানম জানান, পরীক্ষার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ঢাকায় বাসা ভাড়া করে কোচিং করিয়েছি। এমন ফলাফলের পরে যদি আমার মেয়ে কোন দুর্ঘটনা ঘটাতো তাহলে এর দায়ভার কে নিত?

বোর্ডের গাফেলতির কারণে এমনটা হয়েছে যার দায়ভার বোর্ডকেই নিতে হবে বলছেন বরগুনা সরকারি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীরা।

পাথরঘাটার স্থানীয় শিক্ষাবিদ সোহেল আহম্মেদ বলছেন, এ ধরণের ভুল মেনে নেয়া যায়না। যার মাশুল যে কোন শিক্ষার্থীকে জীবনব্যাপী বয়ে বেড়াতে হতে পারে।

বরগুনা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর আ. ছালাম বলেন, প্রথমে ফেল দেখেছি এখন দেখছি পাশ।

বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে গেলে বোর্ড চেয়ারম্যান সিস্টেম এনালিস্ট এফএম শহিদুজ্জামানকে তার কক্ষে ঢেকে এ বিষয় কথা বলেন। সিস্টেম এনালিস্ট এফএম শহিদুজ্জামান এর বক্তব্য ছিল যথেষ্ট সাংঘর্ষিক, তিনি কখন টেলিটককে আবার কখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দুষছেন। আবার এটিকে অতি সাধারণ বিষয় প্রমাণ করতে তিনি অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তায় বোর্ডের আরও নানাবিধ ভুলের কথা উল্লেখ করেন এবং সেগুলোকে স্বাভাবিক বলেই দাবি করেন।

বরিশাল বোর্ড চেযারম্যান প্রফেসর মো.ইউনুছ এর কাছে তাহিরা খানের রোল নম্বর দিলে তার মুঠোফোনে দেখান সে ফেল করেছে। এরপর তাকে তাহিরা খানের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট দেখালে তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায় আমরা টেলিটকের মাধ্যমে ফলাফল দেখি। কিন্তু ফলাফল না মিললে বোর্ডের ওয়েবসাইট দেখি। কারো সমস্যা থাকলে তা আবেদন করলে সিস্টেম এনালিস্টকে দেখতে বলি এবং দ্রুত সমস্যা সমাধান করা হয়।

তিনি আরও বলেন, হাজার হাজার শিক্ষার্থী সকল বিষয়ের ফলাফল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সফটওয়ারে মিলানো সম্ভব নয়। এ ছাড়া তিনি তাহিরার অপুরণীয় ক্ষতির নিজ মুখে স্বীকার করলেও তার দায়ভার কার সে বিষয় কোন সদোত্তর দিতে পারেনি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply