ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আপসেট ছিল সাকিবের নিষিদ্ধ হওয়া

|

সাকিব আল হাসান। ফাইল ছবি।

২০১৯ সালের বিদায়। নতুন বছরের আগমনী সুরে নতুনভাবে শুরুর, নতুন হিসেবের খাতা খোলার আবাহন। সেই সাথে পুরাতনের দিকে ফিরে তাকানোর নস্টালজিয়া। ক্রীড়াঙ্গনের দিকে যদি ফিরে তাকানো হয়; ২০১৯ সালের সবচেয়ে বড় আপসেট ছিল বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের নিষিদ্ধ হওয়া।

২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর জুয়াড়ির কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার কথা গোপন করায় সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল আইসিসি। তবে এরমধ্যে, এক বছরের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখায় ২০২০ সালের অক্টোবরের শেষভাগেই ২২ গজে ফিরতে পারবেন সাকিব।

আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিট-আকসু সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে তিনটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনে। সাকিব আল হাসান দোষ স্বীকার করে নেয়ার পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানায় আইসিসি।

আকসুর অভিযোগ, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে ও ২০১৮ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে দুর্নীতির প্রস্তাব দেয়া হয় সাকিব আল হাসানকে। সাকিব সেটি যথাযথ কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে জানাননি।

এছাড়া, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজে এবং ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ বনাম কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের একটি ম্যাচেও জুয়াড়ির কাছ থেকে দুর্নীতির প্রস্তাব পান সাকিব।

আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে সাকিব আল হাসান দায় স্বীকার করেন। আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী আইনের ২.৪.৪ ধারাতে শাস্তি দেয়া হয় তাকে।

সাকিবের নিষেধাজ্ঞায় এক গভীর অন্ধকার নেমে আসে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। অথচ, তার মাত্র কয়েকমাস আগেই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে কী দারুণ পারফরম্যান্সই না ছিল সাকিবের! ক্রিকেটপ্রেমী বাংলাদেশিদের জন্য আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে এসেছিল সাকিবের একেকটি ইনিংস, উইকেট।

বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচের ৮ ইনিংসের সাতটিতেই পঞ্চাশ পেরোনো স্কোর বাংলাদেশের অলরাউন্ডারের। দুই সেঞ্চুরি ও পাঁচ ফিফটিতে মোট রান ৬০৬। গড় ৮৬.৫৭; স্ট্রাইকরেট ৯৩.০৩! দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৫ রানে টুর্নামেন্ট শুরুর পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (৬৪), ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (১২১), ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে (১২৪*), অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে (৪১), আফগানিস্তানের বিপক্ষে (৫১), ভারতের বিপক্ষে (৬৬), পাকিস্তানের বিপক্ষে (৬৪) রানের ইনিংস খেলেন সাকিব।

তার মেধা বিচারে বোলিংয়ে ততটা ভেল্কি দেখা না পারলেও গোটা টুর্নামেন্টে ৭৪ ওভার বল করে ৩৬.২৭ গড় এবং ৫.৩৯ ইকোনমিতে ১১ শিকার করেন এই বাঁহাতি স্পিনার।

এর আগে, এক বিশ্বকাপে অন্তত ৪০০ রান ও ১০ উইকেট নেবার কীর্তি দেখাতে পারেননি কোনো অলরাউন্ডার। সেখানে সাকিবের এক বিশ্বকাপে ৬০৬ রান ও ১১ উইকেট বিশ্বকাপের রেকর্ডের পাতায় অক্ষয় হয়ে থাকবে অনেকদিন।

তবে, এরপরই যেন নানা কারণে সাকিবের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে বোর্ডের। বিপিএলে দলবদল ইস্যু তো ছিলই, পাশাপাশি বিসিবির অনুমতি ছাড়া গ্রামীণফোনের সাথে চুক্তি করে বিতর্কে পড়েন সাকিব। এরইমধ্যে, সাকিবের নেতৃত্বেই প্রথমে ১১ দফা ও পরবর্তীতে ১৩ দফা দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয় বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। যদিও নানা নাটকীয়তার পর দ্রুততম সময়েই সমস্যার সমাধান করে বিসিবি। আর তার কয়েকদিন পরই জানা গেলো আইসিসির নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান!


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply