চা বিক্রি করে বিশাল পেল জিপিএ-৫

|

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের পাশে বৌ বাজার এলাকায় ছোট্ট একটি চায়ের দোকান। যেখানে বাবাকে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সময় দেয় বিশাল মিয়া। সুযোগ পেলে দিনের বেলা কিংবা দোকান থেকে ফেরার পর একটু পড়তো। আর সে পড়াতেই দরিদ্রতা জয় করে বিশাল এবার পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের সাহেরা গফুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সে পিইসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তার এই ফলাফলে অনেকেই অবাক হয়েছেন। গর্ববোধ করছেন বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরাও।

বিশালের বাবা মো. লিয়াকত মিয়া জানান, তাদের গ্রামের বাড়ির জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা গ্রামে। থাকেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের মৌড়াইল এলাকায়। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসার। বাড়ি ভাড়া, তিন সন্তানের পড়াশোনার খরচসহ অন্যান্য সাংসারিক ব্যয় মেটানো হয় চা বিক্রি আয় থেকে। আগে বড় ছেলে ইভান দোকানে থাকতো। কয়েক বছর ধরে সাথে থাকেন বিশাল।

তিনি আরও জানান, বড় ছেলে ইভান মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের ইসলামপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র। মেয়ে তারিন আক্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী।

বিশাল মিয়া জানান, মা কুলসুম বেগম স্কুলে আসা যাওয়া ও পড়ালেখার ব্যাপারে বেশি উৎসাহ দেন। এছাড়া স্কুলের সব শিক্ষকরাও উৎসাহ জুগিয়েছেন ও সহযোগিতা করেছে। বিশাল মিয়া আরও জানায় প্রায় চার বছর ধরেই তার বাবার সাথে এই কাজে সহযোগিতা করে আসছেন। রাত ১১ /১২ পর্যন্ত চলে তাদের দোকানে চা বিক্রি। দোকান থেকে মালামাল আনা, চা বানানো, ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা রাখাসহ সকল কাজই করত সে। ফলাফল পাওয়ায় পর সে বেশ খুশি।

বিশালের পিইসির ফলাফল বিবরণী থেকে দেখা যায়, সে ছয়টি বিষয়ের প্রতিটিতেই এ প্লাস পেয়েছে। বাংলায় ৮৫, ইংরেজিতে ৮৭, গণিতে ৮০, সমাজ বিজ্ঞানে ৯০, সাধারণ বিজ্ঞানে ৯১ ও ধর্মে ৯৬ নম্বর।

এই ব্যাপারে সাহেরা গফুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন খান জানান, বিশাল ছেলেটি খুব মেধাবী ও পরিশ্রমী। পরিশ্রম করে বাবার সঙ্গে কাজ করে এতদূর লোক এসেছে ছেলেটি। দরিদ্রতা তাকে আটকে রাখতে পারেনি। সে জীবনে অনেক ভালো করবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply