মঈনুল ইসলাম:
ইরানের সঙ্গে পশ্চিম তথা পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার এই দ্বন্দ্ব বহু প্রাচীনকালের। আজকের ইউরোপ ও আমেরিকার শ্বেতাঙ্গদের পূর্বপুরুষদের রোমান ও গ্রীক সাম্রাজ্যকে পদদলিত করেছিল ইরানীদের পূর্বপুরুষ পার্সিয়ানরা। এরা মরে যাবে তবু হাল ছাড়বে না। আপনি যে হলিউডের ‘থ্রি হান্ড্রেড’ সিনেমা দেখে পুলকিত হন তা ইতিহাস বিকৃতি। পূর্বপুরুষের পরাজিত ইতিহাসকে গ্লোরিফাই করতেই এসব প্রোপাগাণ্ডা তৈরি করে। কারণ ব্রিটিশ-ইউরোপীয়ানদের প্রাচীন সভ্যতায় প্রাচ্যের নিকট পরাজয়ের ইতিহাসই ওরা খুঁজে পায়। সে কারণে দারিয়ুস বা তার সন্তান যে ইউরোপ জ্বালিয়ে দিয়ে গেছে তা বাদ দিয়ে ৩০০ জন না খাওয়া স্পার্টানদের দুর্বল কেচ্ছা খাওয়াতে চায় আমাদের যা আসলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পারস্য সাম্রাজ্যের ফুঁ-এর সামনে দাঁড়ানোরই যোগ্য ছিল না।
এমন কী আলেকজান্ডার যে বাঙালির পূর্বপুরুষের ভয়ে পালিয়েছিল সেও ইউরোপীয় গ্রীক-মেসিডোনিয়া থেকে ইরানের এক প্রিন্সেসকে বিয়ে করেই প্রাচ্যে ঢোকার শক্তি, সাহস ও অনুমতি পেয়েছিল। এই হচ্ছে পারস্যের আদি অবস্থান। এরা ছাড় দেয়া জাতি না। চিন্তা করেন একটু। সেই পারস্য উপসাগরের তীর হতে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তার করে ইউরোপে আগ্রাসন চালানো প্রাচ্যের সন্তানদের আধুনিক প্রতিনিধি আহমেদিনেজাদ, রুহানী, খোমেনি, খামেনি বা কাসেম সোলাইমানি। আপনি পশ্চিম আর প্রাচ্যের এই দ্বন্দ্ব তাই এক দুইটা ঘটনা দিয়ে বুঝবেন না। এ লড়াই বহু আগের।
২।
পারস্য যখন শিল্প-সাহিত্য-জ্ঞান-বিজ্ঞানে পৃথিবীতে অনন্য আমেরিকা বলে তখন কিছু ছিলো না। ইউরোপে যারা ছিল তারা শীতে খাওয়ার-পোশাকের কষ্টে দিন কাটাতো। ইউরোপ-আমেরিকার বহু আগের সভ্যতা পারস্য সভ্যতা। অতীত থেকে এরা খুবই লড়াকু জাতি। এরা কোনদিন ইতিহাসে মাথা নত করেনি।
ইতিহাসে একবারই এরা পুরো জাতি অন্য সংস্কৃতির কাছে নত হয়েছে। সেটি হচ্ছে ইসলামী সংস্কৃতি। মুহাম্মদ (স.) এর সাম্যবাদী আদর্শে পার্সী ও তুর্কিরা আসার পর খুব দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে। তবে ইসলাম অগ্নি পূজারী পার্সিয়ানদের আরবের কাছে সাংস্কৃতিক পরাজয় ঘটায়নি, ইসলাম পার্সিয়ান ভাষা-সাহিত্য-শিল্পকে রেখেই বিস্তৃত হয়েছে। তবে ইরান-আরব ঐতিহাসিক বিরোধের কারণেই ইরানের ইসলাম আরবের ইসলামের সঙ্গে মৌলিক জায়গায় এক হলেও সাংস্কৃতিক তফাৎ আছে।
তো, এই ইরানের ইসলামী বিপ্লব সুরক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচটি শাখার সবচেয়ে শক্তিশালী এলিট ফোর্স কুদস ব্রিগেডের প্রধান কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে আমেরিকা পার পাবে এমন ভাবার কারণ নাই। এরা সাদ্দামের ইরাকের সঙ্গে না খেয়ে মরেও ১০ বছর যুদ্ধ করেছে। সেই যোদ্ধা জাতিকে ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লব এক নয়া ধর্মতাত্ত্বিক জগতে এনেছে। যুদ্ধ বহু আগের। এখন চলছে এর নয়া সংস্করণ। ইরানীরা বিশ্বাস করে, তাদের দ্বাদশ ইমাম আল মাহদী আসবেন এবং জেরুজালেম বা আল কুদস মুক্ত করবেন অবৈধ ইসরায়েল ও এর মিত্রদের কবল থেকে। এই থেকেই ‘কুদস ব্রিগেড’ নাম। এরা সেই মহাযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদের বাহিনী দেশ রক্ষা করে, আর এদের এ বাহিনী দেশের পাশাপাশি ধর্মীয় অবশ্য পালনীয় দায়িত্বও পালন করে। ধর্ম, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ এই তিনটির সংমিশ্রণ হলে যেকোনো জাতি হয়ে যায় অজেয়, দুর্দমনীয়, পরাক্রমশালী।
এর মধ্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ধর্মান্তরিত ইহুদী মেয়ে ইভাঙ্কা আর তার ইহুদী জামাই জেরার্ড কুশনারের কুবুদ্ধিতে আমেরিকার স্বার্থ না থাকলেও ইরানের সঙ্গে অহেতুক মহাদ্বন্দ্বে জড়াচ্ছে, অথবা ইভাঞ্জেলিকাল খ্রীস্টান যারা জেসাস বা ঈসা (আ.) এর দ্বিতীয় আগমনকে ত্বরান্বিত করতে জেরুজালেমের স্বীকৃতির পক্ষে ট্রাম্পকে সমর্থন করে তারাও ট্রাম্পকে উস্কিয়ে থাকতে পারে। কারণ সম্প্রতি ট্রাম্প ইভাঞ্জেলিক থিওলজিকাল একজন নারী গুরুকে হোয়াইট হাউজের ‘স্পিরিচুয়াল এডভাইজার’ (আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা) করেছেন। তাই এই জটিল ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক রাজনীতি, ভূ-রাজনীতির পাশাপাশি ধর্মতাত্ত্বিক বিষয়ের সঙ্গেও জড়িত কী না তা নিয়ে প্রতিবয়ান রয়েছে।
এ নিয়ে আমাদের আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক বা পশ্চিমের বিশ্লেষক দুই পক্ষেরই অনাগ্রহ, মিডিয়াও নীরব। এর কারণ হয়তো শেষ সময়ের ব্যাপারে ধর্মগ্রন্থগুলোর ভবিষ্যৎবাণী ও এতে অনুসরণের ব্যাপারে অনুসারীদের তীব্র আবেগ সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা অথবা স্বেচ্ছায় ধর্মকে গুরুত্বহীন হিসেবে উপস্থাপন বা অধ্যয়নের কারণে।
৩।
এখন টুইটার ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা করছেন। কারণ ইরানের মিত্র রাশিয়া এ হামলাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম হিসেবে দেখছে বলেই রাশিয়া টুডে ও স্পুৎনিক নিউজের বয়ানে বোঝা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পারস্য, আরব ও ভূমধ্যসাগরের আশেপাশে মার্কিন ঘাঁটিগুলো ইরানী ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় রয়েছে বলে আক্রান্ত হতে পারে। আর এই আক্রমণ অবশ্যই ন্যাটোকে যুক্ত করবে। আর ন্যাটা যদি আসে নিশ্চিতভাবেই রাশিয়া এতে যুক্ত হবে। তবে ইরান সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর হামলা না চালিয়ে হিজবুল্লাহকে দিয়ে ইসরায়েলের উপর বা হুঁথি যোদ্ধাদের দিয়ে সৌদি আরবে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ঘাঁটির উপর আক্রমণ চালাতে পারে।
ট্রাম্প এ জানুয়ারির নির্বাচনে জিততে হোক বা অভিসংশন হতে রেহাই পেতে হোক বা ইসরায়েলী লবিকে খুশি করতে হোক, যে কারণেই কাসেমী সোলাইমানিকে হত্যা করলো তা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয়ের কারণ হতে যথেষ্ট। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি মার্কিন ঘাঁটি ইরানের নিজ দেশে উৎপাদিত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার আওতায় রয়েছে। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত এই হামলা ও হত্যাকে উস্কানিমূলক হিসেবেই দেখছে বলে তাদের নীরবতা ও বিব্রত অবস্থা প্রমাণ করেছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও ইরানের সঙ্গে ৬-জাতি চুক্তি থেকে একতরফাভাবে ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকাকে প্রত্যাহার করায় ইউরোপের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্কে যাচ্ছিলনা।
এর সঙ্গে ট্রুডো, ম্যাক্রঁ, মেরকেল, জিনপিং, এরদোয়ান প্রমুখর সঙ্গে ন্যাটোর খরচ, শুল্ক, বাণিজ্য যুদ্ধ ইত্যাদি নিয়ে আমেরিকার সম্পর্ক তলানীতে এসে ঠেকে। রাশিয়া, জার্মানি, চীন, মালয়েশিয়া, তুর্কি, পাকিস্তান, জাপান, ব্রিটেন কেউই এই হামলার পর ট্রাম্পকে ইতিবাচক বার্তা জানায়নি। কারণ সন্ত্রাসী বাগদাদী আর বাগদাদীর সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ের প্রধান সিপাহশালার খুনের ঘটনা এক হতে পারে না। ক্ষমতার মোহে ট্রাম্প ও তার রিপাবলিকান প্রশাসন সন্ত্রাসীদের পরাজিত করতে কাসেম সোলাইমানী ও কুদস ব্রিগেড, পপুলার মোবাইলাইজেশন ইউনিট, মাহদী আর্মির অবদান ভুলে গেলেও বিশ্বের আর সকলে তা নিশ্চয়ই ভোলেনি।
৪।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসতে হলে বা থাকতে হলে ইহুদীবাদী লবি যেটি ‘আইপ্যাক’ নামে পরিচিত তার পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন প্রয়োজন হয়। প্রতিটি আমেরিকান রাঘব বোয়াল ইহুদীদের তোষামোদি করে। কারণ আমেরিকার অর্থনীতি, মিডিয়া, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইহুদীবাদীদের নিয়ন্ত্রণে। ট্রাম্প নতুন করে নির্বাচিত হতে তার দ্বারা এদের জন্য এমন কিছু করার দরকার ছিল যেটি ইহুদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে সন্তুষ্ট করবে। তারই কার্যকর রূপ কুদস ব্রিগেডের সোলাইমানীকে হত্যা করা। কাসেমকে হত্যার পর ‘ট্রাম্পের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সোলাইমানীকে হত্যা করা হয়’ এই বয়ান হোয়াইট হাউজ ও মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট নির্লজ্জের মত মিডিয়ায় প্রকাশ করছে। গুপ্তহত্যা যে কাপুরুষের আচরণ তা যেন ভুলতে বসেছে মার্কিন প্রশাসন। সে কারণেই খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরাই ট্রাম্পের পাশে নাই, আর কিছু মিডিয়াও এই হত্যাযজ্ঞের পরে কী ধরনের ভয়াবহতা আসতে পারে তা উল্লেখ করে নিউজ প্রচার করছে।
তাই এই ঘটনায় বিশ্ব দুইভাবে বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। আমেরিকা ও ইসরায়েল এবং তাদের মিত্র বনাম ইরান ও রাশিয়া এবং তাদের মিত্র। ইতিহাস বলে, পৃথিবী দ্বিমেরুকরণ হলে তা সংঘাতের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। বহু মেরু বা একমেরুর পৃথিবী অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিতে থাকে বৈশ্বিক সংঘাতের। সে কারণেই ইরানের সঙ্গে এই প্রকাশ্য যুদ্ধাবস্থা শান্তিপ্রিয় মানুষের চিন্তার কারণ।
ভুলে গেলে চলবে না, ইরান কিন্তু পারমাণবিক চুল্লী দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে এবং বেশ দৃঢ়ভাবে ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা শান্তিপূর্ণ কাজে পারমাণবিক শক্তিকে ব্যবহার করছে। কিন্তু আমেরিকা যখন শান্তিপূর্ণ ইরানের একজন প্রধান সেনাপতি যে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনীর পর দ্বিতীয় ক্ষমতাধর (এমন কী প্রেসিডেন্ট রুহানির চেয়েও) ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, তাকে হত্যা করে প্রকাশ্যে দম্ভ করে মিডিয়ায় রাষ্ট্রীয় বরাতে প্রকাশ করে তখন ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু চুল্লী ‘শান্তির জন্যই পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে’। কারণ ইরানের মিত্র উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন বলেন, ভারসাম্যপূর্ণ পৃথিবী ও শান্তি আনয়নের জন্যই পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োজন।
৫।
মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ইরানের প্রত্যন্ত কেরমেন প্রদেশ থেকে উঠে আসা এক সংগ্রামী সন্তান যিনি ১৯৫৭ সালের ১১ মার্চ জন্মগ্রহণ করে মাত্র ১৩ বছর বয়সে পরিবারের জন্য কায়িক শ্রম করেন। ১৯৭৯ সালে ইমাম আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে হওয়া ইসলামী বিপ্লবে অংশ নিয়ে তিনি তৎকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তাবেদার শাসক রেজা শাহকে ক্ষমতাচ্যূত করার গণআন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৭৯-১৯৮০ এই সময়ে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধে তিনি অসামান্য বীরত্ব প্রদর্শন করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি ইসলামী বিপ্লব রক্ষীবাহিনীর এলিট কুদস ব্রিগেডের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন।
কুদস ব্রিগেড বহির্বিশ্বে ইরান ও ইসলামের স্বার্থ দেখার দায়িত্বে নিয়োজিত। এ ব্রিগেড ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল যুদ্ধে হিজবুল্লাহকে অস্ত্র, অর্থ ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে যার কারণে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি করতে বাধ্য হয়। ২০১১ সালে যখন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ তার দেশের দুই তৃতীয়াংশ বিদ্রোহী বা আল কায়েদা-আইএসের কাছে হারিয়ে প্রায় কোনঠাসা সেই সময় কাসেমের নেতৃত্ব আবার আসাদের জন্য একাদশে বৃহস্পতি হয়ে আসে। রাশিয়ার সঙ্গে কুদস ব্রিগেডের বুদ্ধিবৃত্তিক ও কলাকুশল, অস্ত্র, অর্থ, মিডিয়া, যুদ্ধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহায়তা প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতায় রেখে দেয়। এরপর ইরাকের পিএমইউ, ইয়েমেনের হুঁথি ইত্যাদি আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলোকে বুদ্ধিবৃত্তিক পরামর্শ ও প্রয়োজনে অর্থ, অস্ত্র ও জনবল দিয়ে কখন, কীভাবে সহায়তা করা হবে তা ঠিক করতেন জেনারেল কাসেম সোলাইমানি।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের সম্ভাব্য যুদ্ধ মোকাবেলায় ইরানী বাহিনী, জনগণ ও বহির্বিশ্বের ইরানী মিত্রদের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক কীসের ভিত্তিতে তৈরি করতে হবে, প্রক্সি যুদ্ধে ইরানের অংশগ্রহণ কতটা খোলামেলা হবে, কাউন্টার টেররিজম ও অন্যান্য দেশের গোয়েন্দা কার্যক্রম প্রতিহতকরণে ইরানী সরকারের ব্যবস্থা ও পরিকল্পনার মূল কারিগর ছিলেন কাসেম সোলাইমানি। এ কারণেই ইসরায়েলের মোসাদ, আমেরিকার সি আই এ প্রায় ১৯-২০ বার তাকে গুপ্তহত্যার চেষ্টা করেছে। তার এই মৃত্যু তাই ইরানের জন্য চরম অপূরণীয় ক্ষতি। এ কারণেই সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা ইরান জুড়ে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোকের ঘোষণা দিয়েছে এবং কাসেম সোলাইমানির হত্যার কঠিন বদলা নেওয়ার কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ইরানীরা যে ফাঁকা আওয়াজ দেয় না তা এর আগে পারস্য উপসাগরের থেকে একাধিকবার মার্কিন সেনাদের আটক ও মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনাগুলি প্রমাণ করেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে এই সংঘাত বৈশ্বিক কি আকার ধারণ করতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর এই মুহূর্তে দেয়া যাচ্ছে না। তবে পারস্য উপসাগরের আশেপাশে কোথাও জ্বলে উঠবে যেকোনো সময় এই আশঙ্কা রয়েছে। আর ইরাক-সিরিয়া-পারস্য মহাসাগরের ঘটনা কতদ্রুত বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনাকে প্রভাবিত করে তা আমরা দেখেছি। আমরা শান্তি চাই। শান্তির জন্যই কাসেম সোলাইমানির হত্যার বিচার হওয়া উচিত। সে বিচার আন্তর্জাতিক আদালত না জাতিসংঘের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ হাকিম নিজেই এখানে খুনী।
তাই ইরান প্রচলিত পথে না হেঁটে সরাসরি আক্রমণ অথবা তার কোনো প্রক্সি দিয়ে আক্রমণ করে এই হত্যার বদলা নিতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সেই ১৯৭৯ সালের পর থেকে এই পুরো ইরানী জাতি ‘আল মওতু আম্রিকা, আল মওতি ইসরায়েল’ (আমেরিকার পতন হোক, ইসরায়েলের ধ্বংস হোক) শ্লোগান হৃদয়াঙ্গম করে বেড়ে উঠেছে! এদের কাছে ভীষণ সম্মানের পাত্র কুদস ব্রিগেড প্রধান কাসেম সোলাইমানি তাই শহীদী মর্যাদায় অধিষ্ঠিত এবং শহীদের রক্তের বদলা নিতে শত শত কাসেম সোলাইমানি বুক চাপড়ে উচ্চারণ করছে,
লাব্বাইক ইয়া আল্লাহ
লাব্বাইক ইয়া রাসূলুল্লাহ
লাব্বাইক ইয়া হোসাইন
এই হাজিরা কারবলার মর্সিয়া থেকে উৎসারিত। এই উপস্থিতি দুনিয়ার তাবত জীবীত ইয়াজিদদের জন্য প্রতিশোধবার্তা! যুদ্ধের ডামাডোলও তাই শোনা যাচ্ছে!
লেখক: প্রভাষক, জার্নালিজম এন্ড ম্যাস কমিউনিকেশন,
নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি, খুলনা
Leave a reply