তোহা আর তহুরা- দুই বোন এখন একে অন্যের চেহারা দেখতে পায়। মায়ের কোলে বসে মিটিমিটি হাসে একজন আরেকজনকে দেখে। মাত্র ক’দিন আগেও দু’জনের শরীর ছিল একসাথে জোড়া লাগানো। কোমরের পেছনের দিকে একে অন্যের সাথে যুক্ত থাকায় দু’জনের শরীরে পায়খানার রাস্তা ছিল একটি। এছাড়া মেরুদণ্ডও যুক্ত।
অত্যন্ত জঠিল এই শারীরিক অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া নিয়ে ছিল সংশয়। উভয়কে বাঁচিয়ে অস্ত্রোপচার সম্ভব কিনা এ নিয়ে বিশেষজ্ঞা চিকিৎসকরা দ্বিধায় ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তোহা ও তহুরাকে সুস্থভাবে আলাদা করতে সক্ষম হন ঢাকা মেডিকেলের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা।
দু’বোন এখন সুস্থ আছে। গত বৃহস্পতিবার সেলাই কাটা হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে তাদেরকে। স্বাভাবিক জীবন নিয়ে বেড়ে উঠবে দুই বোন।
মুক্তামনির নাম না জানা মানুষ এখন বাংলাদেশে আছে কিনা সন্দেহ। কিশোরী এই মেয়েটিও বাংলাদেশে চিকিৎসা সাফল্যের একটি দৃষ্টান্ত। সিঙ্গাপুরের নামকরা একটি হাসপাতাল বলে দিয়েছিল, তার হাতের বিরল টিউমারটি কেটে সরানো সম্ভব না। এরপর হাল ছেড়ে দেয়া পরিবার তাকে দেশে নিয়ে আসে। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা হাল না ছেড়ে চেষ্টা চালিয়ে যান। অবশেষে এ মাসের শুরুতে সফল অপারেশনের মাধ্যমে টিউমারটি অপসারণ করেন তারা। মুক্তামনির পরবর্তী অবস্থা কী হবে তা নিয়ে নিশ্চিত করে এখনো কিছু বলেননি চিকিৎসরাও। তবে টিউমার অপসারণ করতে পারায় বেঁচে থাকার স্বপ্ন উঁকি দিতে শুরু করেছে তার চোখে।
আবুল বাজানদার এখন পুরো বিশ্বেই পরিচিত। ‘বৃক্ষমানব’ অভিহিত করে এই যুবকের বিরল রোগ নিয়ে সংবাদ প্রচার করে বিশ্বের তাবৎ গণমাধ্যম। তবে সেই বিরল রোগের প্রকোপ থেকে বাজানদার এখন অনেকটাই মুক্ত। এখনো চিকিৎসাধীন থাকলেও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছেন। এক্ষেত্রেও কৃতিত্ব ঢাকা মেডিকেলের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের।
এ ক’টি উদাহরণ মাত্র গত কিছুদিনের। এর বাইরেও অতীতে অনেক বিরল রোগের চিকিৎসা করে সালফ্য দেখিয়েছেন বাংলাদেশের চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্য সেবায় চরম নৈরাজ্য, চিকিৎসকদের বানিজ্যিক মানসিকতা-স্বেচ্ছারিতা, রোগীদের সাথে দুর্বব্যহার এসবের কারণে চিকিৎসকদের প্রতি সাধারণ মানুষ অসন্তুষ্টি আছে। স্বাবলম্বীরা পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এতসব নেতিবাচক দৃষ্টান্তের ভিড়ে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের একাংশের পেশাগত আন্তরিকতা ও সাফল্য আশা জাগায় সাধারণ মানুষের মনে।
এ ধরনের সাফল্য আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে চিকিৎসকদের। ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বিদেশ থেকে হতাশ হয়ে ফিরে আসা রোগী যখন আমাদের চেষ্টায় স্বাভাবিক জীবন পাচ্ছেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।
/কিউএস
Leave a reply