সালমান শাহর মৃত্যুর কারণ হিসেবে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চিত্রনায়িকা শাবনূরের সাথে অতি অন্তরঙ্গতাকে আত্মহত্যার একটি কারণ হিসেবে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন শাবনূর। তখন সালমানের স্ত্রী ছিলেন সামিরা হক। পিবিআই’র প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনিও মুখ খুলেছেন। বলেছেন, কৃতকর্মের জন্য ‘স্যরি’ বলতে হবে শাবনূরকে। সেটা এখন হোক কিংবা পরে, এই জীবনে কিংবা শেষ বিচারের দিনে।
গণমাধ্যম প্রথম আলোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সামিরা জানান, সালমান শাহ ও শাবনূর যে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন, সে কথা সালমান নিজেই তার কাছে স্বীকার করেছিলেন।
তিনি বলেন, তাকে (সামিরা) নিয়েই শুটিংয়ে যেতেন সালমান। তার প্রায় প্রতিটি সিনেমায় সালমানের ‘ড্রেস ডিজাইনার’ ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে বাদল খন্দকারের একটি সিনেমার শুটিংয়ে কক্সবাজারে গিয়ে সম্পর্কে জড়ান সালমান ও শাবনূর। একই বছরে শাবনূরকে নিয়ে সিঙ্গাপুরে যান সালমান। সেখান থেকে ফিরে সালমান নিজেই সামিরাকে বলেন, তিনি একটা অন্যায় করে ফেলেছেন। শাবনূরের সঙ্গে এমন কিছু পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে তাকে ব্ল্যাকমেল করা হতে পারে। সামিরা তখনই বিবাহবিচ্ছেদ চেয়েছিলেন।
এরপর কিছু গণমাধ্যমে সালমান শাবনূরকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন বলে খবর বেরোয়। এক পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলন করে সালমানকে ঘোষণা দিতে হয় যে তার স্ত্রীর নাম সামিরা।
ঘটনা পরম্পরায় রাগ করে চট্টগ্রামে বাবার বাড়ি চলে যান সামিরা। পরে, সব ভুলে আবার নতুন করে শুরু করতে সালমানের কাছে ফেরেন। তিনি বলেন, ইমন কতটা আবেগপ্রবণ ছিল, সেটা কেউ বুঝবে না। ভাববে সিনেমাটিক। আমি ফিরে দেখলাম, রাগ করে চট্টগ্রাম যাওয়ার আগে যেভাবে যা রেখে গেছি, সেভাবেই আছে। ইমন মাটিতে ঘুমোচ্ছে। সঙ্গে আমার একটা টপস।
এরপর, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির পুরস্কার গ্রহণ অনুষ্ঠানেও দু’জনে একসঙ্গে যান। ওই বছর সালমান সেরা চিত্রনায়ক ও শাবনূর সেরা নায়িকার পুরস্কার পেয়েছিলেন। তবে শাবনূর ওই অনুষ্ঠানে আসেননি। এর দু’দিন পর আত্মহত্যা করেন সালমান।
সামিরা জানান, কারও প্রতি তার কোনো রাগ বা ক্ষোভ নেই। শুধু শাবনূর তার সঙ্গে যা করেছেন, সেটা তিনি ভুলতে পারেন না। একটা সময় তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ছিল। তিনি সাজগোজ করতে শিখিয়েছিলেন শাবনূরকে। তার টি-শার্ট পরে একটি ছবিতে অভিনয়ও করেছেন শাবনূর। সেই মেয়েটি কী করে সালমানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালেন, এ নিয়ে দুঃখ হয় সামিরার।
সালমানের মা নীলা চৌধুরীর কথায় মানুষ তাকে সালমানের মৃত্যুর জন্য দায়ী মনে করতো। এছাড়া, বিভিন্ন দফায় পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল তাকে। সামিরা জানান, সালমানের মৃত্যুর পর তার জীবনটাও হয়ে উঠেছিল দুঃসহ।
উল্লেখ্য, বাংলা সিনেমার তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহর সঙ্গে সামিরা হকের বিয়ে হয় ১৯৯২ সালের ২০ ডিসেম্বর। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৪ বছর বয়সে নিজ বাসা থেকে সালমানকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর হাসাপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। তার মৃত্যুরহস্য নিয়ে তখন থেকেই নানা গুঞ্জন চলে আসছে। ১৯৯৯ সালে দুই পরিবারের সম্মতিতে সালমান শাহর বন্ধু মোস্তাক ওয়ায়েজকে বিয়ে করে সালমানের স্ত্রী সামিরা হক।
Leave a reply