করোনাভাইরাসের আঁতুরঘর চীনে হলেও ইতালিতে মৃত্যুর সংখ্যা এখন পর্যন্ত সবথেকে বেশি। সেখানে পৃথিবীর সর্বোচ্চ- ১১ হাজার ৫৯১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রশ্ন আসছে কেন দেশটিতে মৃত্যুর হার এত বেশি? এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন প্রকাশ করেছে সেই তথ্য।
সিএনএন’র ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপের দেশ ইতালিতে এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১ লাখ ১ হাজার ৭৩৯ জন, যেখানে চীনে এ সংখ্যা ছিল ৮১ হাজার ৯৯৭। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৪২ হাজার ছাড়ালেও মৃত্যুর সংখ্যা আড়াই হাজারের মতো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইতালির মৃত্যুহার বেশি হওয়ার পেছনে একাধিক উপাদান একসঙ্গে কাজ করেছে।
সিএনএন জানায়, আক্রান্তের সংখ্যা বাস্তব নয়। মিলানের সাকো হসপিটালের সংক্রামক ব্যাধি বিভাগের প্রধান মাসিমো গালি বলেন, করোনাভাইরাসে নিশ্চিত শনাক্ত হিসেবে ইতালিতে যে সংখ্যা দেখানো হচ্ছে তা পুরোপুরি সঠিক নাও হতে পারে।
এদিকে শুধু সংক্রমণের সবচেয়ে জটিল ঘটনাগুলোকেই পরীক্ষা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ এসেছে। এ কারণেই মৃত্যুর হার অনেক বেশি দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, ইতালির সবচেয়ে আক্রান্ত এলাকা উত্তরের লম্বার্ডি থেকে প্রতিদিন মাত্র ৫ হাজার কফের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, যা প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম।
সেখানে ঘরে ঘরে হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছেন। আবার এই পরীক্ষা করতে গিয়ে সুরক্ষা সরঞ্জামের সীমাবদ্ধতার কারণে স্বাস্থ্যকর্মীদের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
ইতালির এই চিকিৎসক বলেন, আমাদের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো। বিশেষ করে লম্বার্ডি এলাকায় আরও ভালো। কিন্তু তারপরও মহামারীতে এটা ভেঙে পড়েছে।
ব্যাপক সংখ্যক বয়োবৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর কারণেও থমকে যেতে হচ্ছে। অন্য যে উপাদানটি নভেল করোনাভাইরাসে ইতালিতে উচ্চ মৃত্যুহার দেখাচ্ছে তা হল- জাপানের পর এই দেশে বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি।
দেশটির হেলথ ইন্সটিটিউট শুক্রবার বলেছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের গড় বয়স ৭৮ বছর।
মাসিমো বলেন, নানা রোগ নিয়েও বৃদ্ধদের বাঁচিয়ে রাখতে সফল ছিল ইতালির সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। কিন্তু করোনাভাইরাসের এমন সংক্রমণে তৈরি নাজুক অবস্থায় ভেঙে পড়ছেন তারা। তবু এর মধ্যেও আশাবাদী হওয়ার ঘটনা আছে।
উদাহরণ হিসেবে ১০২ বছর বয়সী গ্রন্ডোনা ইতালিকার কথাই ধরা যাক। তিনি সম্প্রতি ইতালির জেনোয়া শহরে ২০ দিন হাসপাতালে কাটানোর পর সুস্থ হয়েছেন। চিকিৎসকরা তাকে ‘হাইল্যান্ডার’ বা ‘অমর’ আখ্যা দিয়েছেন।
Leave a reply