করোনা মহামারীতে প্রাণহানির সংখ্যায় স্পেন ও ফ্রান্সকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাজ্য। বুধবার দেশটিতে মৃত ব্যক্তিদের সংশোধিত তালিকায় একদিনে সাড়ে ৪ হাজার মৃত্যুর তথ্য প্রকাশের পরই নতুন এই অবস্থান চিহ্নিত হয়েছে।
বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালির পরই এখন যুক্তরাজ্য। নতুন তালিকায় হাসপাতালের বাইরে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কেয়ারহোমসহ অন্যান্য জায়গায় মারা যাওয়া করোনা রোগীদের সংখ্যা যোগ করায় যুক্তরাজ্যে প্রাণহানি ২৬ হাজার পেরিয়ে গেছে।
বিশ্বের অষ্টম দেশ হিসেবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে রাশিয়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে দুটি ট্রাকে পচতে থাকা অর্ধশত লাশ পাওয়া গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমণ শূন্যে নেমে এসেছে।
করোনায় প্রথম মৃত্যু দেখল মালদ্বীপ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন। খবর বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ লাখ ৩৭ হাজার ৬০০। মারা গেছেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৮১৯ জন। অবস্থা আশঙ্কাজনক ৬০ হাজার ৮ জনের। সুস্থ হয়েছেন ১০ লাখ ১০ হাজার ৮০ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ৮১ হাজার ৬৭৮ জন। মারা গেছে ৬ হাজার ৫৯৩ জন, যা আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ৬ হাজার ৩৬৫ জন।
করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত ইউরোপ ও আমেরিকা। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ২ হাজার ৩৯০ জন, আগের ২৪ ঘণ্টায় যা ছিল ২ হাজার ৪৭০ জন।
দেশটিতে মোট আক্রান্ত ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৭৩৭, মৃত্যু হয়েছে ৬১ হাজার ৬৭০ জনের। যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনায় মৃত্যুতে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই ইউরোপের। ইতালিতে মোট আক্রান্ত ২ লাখ ৩ হাজার ৫৯১ জন। দেশটিতে মারা গেছেন ২৭ হাজার ৬৮২ জন।
স্পেনে মোট আক্রান্ত ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৩৯, মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ৫৪৩ জনের। ফ্রান্সে আক্রান্ত ১ লাখ ৬৬ হাজার ৪২০, মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ৮৭ জনের।
যুক্তরাজ্যে হাসপাতালে মৃত্যুবরণকারী করোনা রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে এর বাইরে বিভিন্ন কেয়ারহোম বা অন্যান্য জায়গায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করা হয় সাপ্তাহিকভাবে।
বুধবার ডাউনিং স্ট্রিটে এক ব্রিফিংয়ে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, নতুন পদ্ধতিতে আমরা মৃতের সংখ্যা গণনা করতে শুরু করেছি। তাতে ৩ হাজার ৮১১ জন অতিরিক্ত মৃতের তথ্য পেয়েছি। সে কারণে আজ মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৪১৯ জন।
যুক্তরাজ্যই প্রথম হাসপাতাল, নার্সিং হোম, ক্লিনিক ও বাসায় মারা যাওয়া সব মৃত্যুর হিসাব নথিভুক্ত করে তালিকা প্রকাশ করছে। এই তালিকায় ২ মার্চ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সে কারণে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে।
৪ হাজার ৪১৯ জন মারা যাওয়ায় দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৬ হাজার ৯৭। যা ইউরোপের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু। দেশটিতে মোট আক্রান্ত ১ লাখ ৬৫ হাজার ২২১ জন।
নিউইয়র্কে ট্রাকে মিলল পচতে থাকা লাশ : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি ফিউনেরাল হোমের সামনে রাখা দুটি ট্রাকের ভেতর পচতে থাকা অর্ধশত লাশ পাওয়া গেছে। ফিউনেরাল হোমটির লাশ রাখার হিমাগার অচল হয়ে পড়ায় এ মৃতদেহগুলো ট্রাক দুটোর ভেতরে রাখা হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে।
তীব্র দুর্গন্ধ বের হওয়ার পর খবর পেয়ে পুলিশ এসে ট্রাক খুলে লাশগুলো উদ্ধার করে। বুধবার ব্রুকলিনের ইউটিকা অ্যাভিনিউর অ্যান্ডরু টি ক্লেকলি ফিউনারেল হোমের সামনে রাখা ট্রাক দুটি থেকে এ মৃতদেহগুলো পাওয়া যায়। বডি ব্যাগের ভেতর রাখা লাশগুলোর মধ্যে কতটি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তির তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, তদন্তকারীরা জেনেছেন যে, ফিউনারেল হোমের পক্ষ থেকে লরিগুলো ভাড়া করা হয়। পরে বরফ দিয়ে প্রায় ৫০টি মরদেহ রাখা হয়।
আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়াল রাশিয়ায় : রাশিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন অন্তত ৭ হাজার ৯৯ জন, যা এখন পর্যন্ত তাদের একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার করোনাভাইরাস ক্রাইসিস রেসপন্স সেন্টার জানিয়েছে, এ পর্যন্ত দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৪৯৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ১০১ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৩ জন।
দেশটিতে এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৬১৯ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১ হাজার ৩৩৩ জন। এদিনই প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ৮৫টি প্রশাসনিক অঞ্চলেই করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
রাশিয়ায় সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমিত এলাকা রাজধানী মস্কো। দেশটির প্রায় অর্ধেক রোগীই এ অঞ্চলের। গত ২৪ ঘণ্টায় শহরটিতে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজারেরও বেশি।
মালদ্বীপ ও ইয়েমেনে প্রথম মৃত্যু : মালদ্বীপের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, রাজধানী মালেতে ৮৩ বছর বয়সী এক নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী আবদুল্লা আমিন দেশে প্রথম মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপে এখন পর্যন্ত ২৮০ জনের করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্তদের বেশির ভাগই অভিবাসী শ্রমিক। এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে করোনাভাইরাসে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে এটাই প্রথম করোনায় প্রাণহানি।
ইয়েমেনের দক্ষিণের শহর এইডেনের এক হাসপাতালে দুই ভাই মারা গেছেন। সরকারি সূত্রে এ পর্যন্ত পাঁচজনের দেহে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। পাঁচ বছরেরও বেশি সময়ের যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত ইয়েমেনের স্বাস্থ্যসেবা। যে কারণে করোনাভাইরাস ঠেকানোর প্রস্তুতিও যথাযথ নেই।
স্পেনের সাগরতীরে জীবাণুনাশক স্প্রে, পরিবেশবাদীদের ক্ষোভ : শিশুদের করোনাভাইরাস থেকে রক্ষার অজুহাতে স্পেনের সমুদ্রতীরে জীবাণুনাশক ছিটিয়েছে একটি অবকাশ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ। দুই কিলোমিটারেরও বেশি এলাকায় জীবাণুনাশক ছিটানো হয়।
এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। তারা বলছেন, এর ফলে সেখানকার বাস্তুসংস্থানের মারাত্মক ক্ষতি হবে। প্রায় দেড় মাসেরও বেশি সময় পর ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথমবারের মতো বাড়ির বাইরে বের হওয়ার অনুমতি পেয়েছে দেশটির শিশুরা।
এর একদিন আগেই জাহারা দ্য লস আতুনস অবকাশ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ সমুদ্রতীরে জীবাণুনাশক ছিটায়। কাদিজ অঞ্চলের একটি স্বেচ্ছাসেবী পরিবেশবাদী গ্রুপের প্রধান মারিয়া ডোলারিস ইগলিসিয়াস বলেন, ব্লিচ খুব শক্তিশালী জীবাণুনাশক, এটি রাস্তা বা অন্য কোনো জায়গার জীবাণু মেরে ফেলতে ব্যবহার করা যৌক্তিক কিন্তু এখানে যে ক্ষতি হয়েছে তা নৃশংস।
স্থানীয় কর্মকর্তা অগাস্টিন কোনেজো স্বীকার করে নিয়েছেন, এটা ভুল পদক্ষেপ ছিল। তিনি বলেন, আমি স্বীকার করছি এটা ভুল, কিন্তু ভালো উদ্দেশ্য থেকেই এটা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ছয় সপ্তাহ ঘরে বন্দি থাকা শিশুদের মধ্যে যারা সমুদ্র দেখতে আসবে তাদের নিরাপদ রাখতেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল।
Leave a reply