করোনা সারাবিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। করোনার জন্য পুরো পৃথিবীতে এখন অচল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর কবে নাগাদ এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে তাও বলা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রাণঘাতী করোনা মহামারী নিয়ে সবার এখন একটাই প্রশ্ন- করোনা শেষ হতে কতদিন লাগবে? আর মানুষ কবে নাগাদ তাদের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনে ফিরতে পারবে?
যদিও এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে ওঠেপড়ে লেগেছেন বিজ্ঞানীরা। শতাধিক গবেষক দল নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এ ভাইরাসে গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভাইরাস মোকাবেলায় দেশে দেশে চলছে লকডাউন, জরুরি অবস্থাসহ নানা পদক্ষেপ।
ইতিহাসবিদদের মতে, মহামারী সাধারণত দুই ভাবে শেষ হয়ে থাকে। এক. ওষুধ আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে।
দুই. সামাজিকভাবেও মহামারী সমাপ্তি ঘটে যখন মহামারী–সংক্রান্ত ভয় কেটে যায় মানুষের।
করোনা থেকে বেরিয়ে আসার কৌশল কী হবে? সে বিষয়ে এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিষয়ক অধ্যাপক মার্ক উলহাউজ বলেন, বিষয়টি নিয়ে পৃথিবীর কোন দেশেরই কৌশল নেই। এই কৌশল ঠিক করা বড় ধরনের বৈজ্ঞানিক এবং সামাজিক চ্যালেঞ্জ।
তবে তিনি তিনটি উপায়ের কথা জানিয়েছেন। ১. টিকা দেয়া। ২. বহু মানুষের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের ফলে তাদের মধ্যে এনিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে। ৩. স্থায়ীভাবে মানুষ এবং সমাজের আচার-আচরণে পরিবর্তন নিয়ে আসা।
জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধবিষয়ক ইতিহাসবিদ জেরেমি গ্রিন বলেন, কোনো মহামারী আসলে পুরোপুরি শেষ হয় না। একটি অসুখকে পরাজিত করা যায় মাত্র। মানুষ একটা সময় উদ্বেগের মধ্যে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে যায় এবং শিখে যায়, অসুখের মধ্যেও কীভাবে বাঁচতে হয়
ব্রিটেনের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার প্যাট্রিক ভ্যালান্সি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কখন কোন পর্যায়ে যাবে সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়া সম্ভব নয়।
লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের অধ্যাপক নিল ফার্গুসন বলেন, আমরা সংক্রমণের মাত্রা কমিয়ে রাখার চেষ্টা করছি। যেন মানুষ কম আক্রান্ত হয়।
তিনি বলেন, যদি দুই বছরের বেশি সময় যাবত এটা করতে পারি তাহলে দেশের একটি বড় অংশ ধীরে ধীরে আক্রান্ত হবে। এর ফলে স্বাভাবিক নিয়মে রোগ প্রতিরোধ গড়ে উঠবে।
কোনো মহামারীতে আক্রান্ত না হয়েও মানুষ মহামারির ভয় পেতে পারে। আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনের চিকিৎসক সুসান মারি এর একটি উদাহরণ তুলে ধরেছেন
২০১৪ সালের ইবোলার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ওই সময় আয়ারল্যান্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করেছেন তিনি। ইবোলায় ১১ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল পশ্চিম আফ্রিকায়। কিন্তু আয়ারল্যান্ডে ইবোলার সংক্রমণ দেখা যায়নি। যদিও দেশটির মানুষের মধ্যে এ নিয়ে ভীতি ছিল।
গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসের মহামারীও এভাবেই শেষ হবে। হয় এর ওষুধ আবিষ্কার হবে নয়তো সামাজিকভাবে এর পরিসমাপ্তি টানা হবে।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর চার মাস পেরোলেও নিয়ন্ত্রণের কোনো লক্ষণ নেই।
এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪৩ লাখ ৪২ হাজার, মারা গেছে দুই লাখ ৯২ হাজারেরও বেশি এবং সুস্থ হয়েছে ১৬ লাখ।
সূত্র: বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমস
Leave a reply