করোনাকালে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে নাম হয়েছে ‘স্প্রে আশিক’

|

শহরের দোকানগুলোতে জীবাণুনাশক ছিটাচ্ছেন আশিক।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকেই শহরের হাসপাতাল, ক্লিনিক, মসজিদ-মন্দির, সরকারি-বেসরকারি অফিসে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে যাচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করা
আশিক। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তিনি ১৮ লিটারের জীবাণুনাশক যন্ত্র কাঁধে নিয়ে ছুটছেন সকাল-সন্ধ্যা। জীবাণুনাশক ছিটানো তার নেশায় পরিণত হওয়ায় তাকে এখন ‘স্প্রে আশিক’ নামেই ডাকেন স্থানীয়রা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মুন্সেফপাড়া এলাকার প্রয়াত মো. হাবিব আলমের ছেলে মো. আশিকুল আলম। আশিক জানান, প্রথমে নিজে সুরক্ষিত থাকার চিন্তা থেকে গত ২৪ মার্চ তিনি জীবাণুনাশক ছিটানোর যন্ত্র কিনেন। একই দিন তিনি নিজের ঘর ও আশপাশের রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটান। পরে এলাকার অন্যদের কথা চিন্তা করে শুরু করেন স্প্রে কার্যক্রম। সেই থেকে আজ অবধি তিনি স্প্রে করেই যাচ্ছেন।

আশিক বলেন, “মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নাগরিক দায়িত্ববোধ থেকেই জীবাণুনাশক ছিটানোর এই উদ্যোগ গ্রহণ করি। চারপাশের পরিবেশ, রাস্তাঘাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস, পাড়া-মহল্লা, হাসপাতাল- ক্লিনিক, মসজিদ-মন্দির, রিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ সব জায়গাই যেন জীবাণুমুক্ত থাকে সেজন্যই আমি এই কাজ করে যাচ্ছি। এখন বলা যায়, স্প্রে করাটা আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। এক সময়ের অচেনা প্রতিবেশীরাও আমাকে এখন স্প্রে আশিক নামে চিনেন।”

তিনি আরও বলেন, পানির সঙ্গে ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে জীবাণুনাশক তৈরি করি। এরপর ১৮ লিটারের স্প্রে মেশিনটি ভর্তি করে কাঁধে নিয়ে সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ি। এটি শেষ হলে আবারও পানিতে ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে নতুন করে তৈরি করি।

এভাবে প্রতিদিন অন্তত ১৭/১৮ বার, অর্থাৎ ৩০০ লিটারের অধিক জীবাণুনাশক ছিটানো শেষে বাসায় ফেরা তার নিত্যদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল সদর হাসপাতাল জামে মসজিদে স্প্রে করার সময় কথা হয় আশিকের সাথে। বলেন, শুক্রবার হলে জুম্মার নামাজের কথা চিন্তা করে মসজিদ গুলোতে স্প্রে করি। এছাড়াও তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নার্সিং ইন্সটিটিউটের ডরমিটরি এবং মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ছাড়াও সড়কে চলাচলরত রিকশা ও ইজিবাইক স্প্রে করতে দেখা গেছে।

আশিক জানান, সমাজের মানুষের জন্য কাজ করতে যেমন ভালো লাগে, তেমনি ঘুরে বেড়াতেও ভালো লাগে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, গ্রিস, আরব আমিরাত, জর্ডান ও মিশর ভ্রমণ করেছেন তিনি। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, পেরু, বলিভিয়া, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, জাপান, কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, ভ্যাটিকান সিটি ও ভারতসহ ৩০ টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন।

২০০৯ সাল থেকে বিদেশ ভ্রমণ শুরু করা আশিক এই পর্যন্ত পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে ছয়টি দেখেছেন। মেক্সিকোর চিচেন ইৎজা দেখার বাকি রয়েছে তার। এছাড়াও তিনি ইতালির কলোসিয়াম ও জর্ডানের পেত্রায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন বলে জানান।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply