ভারতে ভয়াবহ করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ায় দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রায় দুই মাসের কঠোর লকডাউন সত্ত্বেও ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত মুম্বাইয়ে করোনার ভয়াবহ প্রকোপ শুরু হয়েছে।
দেশটির মোট করোনা রোগী এক চতুর্থাংশই মুম্বাইয়ের; বর্তমানে ৪৭ হাজারের বেশি মানুষ সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যেখানে পুরো ভারতে করোনা আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ১ লাখ ৯১।
টাইমস অফ ইনডিয়া জানিয়েছে, মহামারির প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠা মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ের করোনা হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে সারি সারি মরদেহ পড়ে আছে। শয্যা সঙ্কটে রোগীদের মেঝেতে ঘুমানোর নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।
করোনাভাইরাস আক্রান্ত কিনা সে ব্যাপারে প্রমাণ দেখাতে না পারায় বিনা-চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন রোগীরা। প্রত্যেকদিন নতুন নতুন ওয়ার্ড করা হচ্ছে। কিন্তু সন্ধ্যা হতে না হতেই সেসব ওয়ার্ড করোনা রোগীতে ভরে যাচ্ছে।
সেন্ট্রাল মুম্বাইয়ের সরকারি কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সাদ আহমেদ বলেন, আমরা প্রত্যেকদিন নতুন নতুন ওয়ার্ড চালু করছি। কিন্তু দিনের শেষে কোভিড-১৯ রোগী দিয়ে সেগুলো পূর্ণ হচ্ছে। বর্তমানে এটা অত্যন্ত খারাপ অবস্থা।
গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মুম্বাইয়ের সরকারি লোকমান্য তিলক হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে করোনাভাইরাসে মৃতদের দেহ পড়ে আছে। পাশের শয্যায় করোনা রোগীরা।
এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ডিনকে সরিয়ে দেয়। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালের ওয়ার্ডে মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
সিওন এবং কেইএম হাসপাতালে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, মৃতদেহের পাশেই সেবা দেয়া হচ্ছে রোগীদের, ওয়ার্ডে রোগীদের ভিড়ে তিলধারণের জায়গা নেই। এমন অবস্থার ভিডিও নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সোয়াতি রানে বলেন, ‘স্বপ্নের শহর দুঃস্বপ্নের শহরে পরিণত হয়েছে।’
বলা হয়, মুম্বাই কখনো থামে না কিন্তু করোনাভাইরাস সব থামিয়ে দিয়েছে। মুম্বাই ছোট ছোট কতগুলো দ্বীপ নিয়ে গঠিত, যার বেশির ভাগ অংশই আরব সাগরবেষ্টিত, বছরজুড়েই কাজ আর ভাগ্যের সন্ধানে সারা ভারতের লাখ লাখ বাসিন্দা আসেন এখানে।
তবে মহামারির যুদ্ধে শহরটির এমন বেহাল দশার অন্যতম বড় একটি কারণ হচ্ছে এর জনসংখ্যার ঘনত্ব। ডাব্লিউইএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী এটি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনঘনত্বের শহর।
Leave a reply