আহমেদ নাসিম আনসারী, ঝিনাইদহ:
বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন মহেশপুরের মেধাবী ২ যমজ বোন রুকাইয়া ও রাবেয়ার। তারা ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
তার পিতা মিজানুর রহমান খাঁন একজন গরিব ভূমি জরিপকারী (আমিন)। মেধাবী চার মেয়ের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি, এখন ভালো ফল নিয়ে ছোট যমজ ২ মেয়ে কলেজে ভর্তি হবে কীভাবে,
খরচ কোথায় পাবেন? মেয়ে ভালো ফল করায় চিন্তা বেড়েছে এই দরিদ্র পিতা-মাতার। তাদের লেখাপড়া
নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রুকাইয়া ও রাবেয়া ঝিনাইদহের মহেশপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ
করে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তারা মহেশপুর পৌরসভাধীন জলিলপুর খান পাড়ার মিজানুর রহমান
খাঁন ও সাহিদা খাঁনের যমজ ২ মেয়ে।
বাবা মিজানুর রহমান খাঁন বেসরকারিভাবে ভূমি জরিপের কাজ করে। তার চার মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়েই
সংসার। সীমিত আয় দিয়ে মেধাবী চার মেয়ের পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন খুব কষ্ট করে। বড় মেয়ে সাইদাতুনেচ্ছা যশোর সরকারি এমএম কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্সের শেষ বর্ষের ছাত্রী এবং মেজো মেয়ে জান্নাতুনেচ্ছা যশোর সরকারি এমএম কলেজে অনার্সে ইংরেজি বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী। ছোট ২ মেয়ে রুকাইয়া ও রাবেয়া এবার এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। ২ বোনের মোট প্রাপ্ত নম্বর ২০১৭।
যমজ ২ বোন যমুনা নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এ সাফল্যের পেছনে আমাদের পিতা-মাতা, পরিবার ও
শিক্ষকদের অবদান সবচাইতে বেশি। আমরা লেখাপড়া করে ডাক্তার হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে চাই।’
তারা আরও বলেন, ‘তারা ডাক্তার হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে চাই কিন্তু প্রধান অন্তরায় পরিবারের
দরিদ্রতা। ৪ শতক ভিটে জমি ছাড়া আমাদের আর কিছুই নেই। পিতা সামান্য ভূমি জরিপের কাজ করে,
মা একজন গৃহিণী। চার বোনের লেখাপড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পিতা-মাতা।’
মা সাহিদা খাতুন বলেন, ‘আমার চার মেয়েকেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। তারা মানুষের মতো
মানুষ হবে, এটাই আমার কাম্য।’ কিন্তু আমার সে স্বপ্ন কি বাস্তবায়ন হবে?
পিতা মিজানুর রহমান খাঁন বলেন, ‘আমি চাই তাদের ভালো কলেজে ভর্তি করাতে। তবে লেখাপড়া করাতে অনেক খরচ। এমনিতেই বড় দুই মেয়েকে খরচ দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় আমাকে। এবার ছোট ২ মেয়েও ভালো রেজাল্ট করেছে। চিন্তা বেড়ে গেলো। এদিকে তাদের ইচ্ছা ডাক্তার হওয়ার।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিভাবে ভালো কলেজে ভর্তি করবো, অর্থের অভাবে রয়েছি। একলা কাজ করে আর পেরে দিচ্ছি না। তারপরেও কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে সাধ্য মতো চেষ্টা করে দেখি, ভালো কোথাও মেয়েকে ভর্তি করাতে পারি কিনা।’ কিন্তু অভাবের কারণে তাদের হয়তো বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি করা আমার জন্য কষ্টকর হবে। দরিদ্র এই পরিবারের যমজ সন্তানের লেখা পড়ার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারের আর্থিক সঙ্কট।
মহেশপুর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রঞ্জন কুমার জানান, ‘যমজ ২ বোনের সফলতা আমাদের স্কুলের গর্ব। তারা ২ বোনই অসম্ভব মেধাবী। আমি তাদের সফলতা কামনা করি।’
Leave a reply