কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যু নিয়ে এক জায়গায় লিখেছেন, ‘মৃত্যু দিয়ে যে প্রাণের মূল্য দিতে হয়/ সে প্রাণ অমৃতলোকে/মৃত্যুকে করে জয়।’ অনবদ্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির মণিকোঠায় ঠাঁই নিয়েছেন। কিন্তু মানব জীবনপথের যে পরিসমাপ্তি মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সেটাকে বরণ করেছেন কবি।
আজ সেই দিন, ২২ শ্রাবণ। বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রটি খসে পড়েছিল এ দিনেই। বর্ষার এমনই দিনে ৭৯ বছর আগে ১৯৪১ সালের ৬ আগস্ট, বাংলা ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বাংলা সাহিত্য ও কাব্যগীতির শ্রেষ্ঠ রূপকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরলোকগমন করেন। ৮০ বছর বয়সে চলে গেলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ মৃত্যু দেহান্তর মাত্র।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনেক কিছুরই প্রথম রূপকার তিনি। তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্যে নতুন যুগের সৃষ্টি হয়। বাংলা গদ্যের আধুনিকায়নের পথিকৃৎ রবিঠাকুর ছোটগল্পেরও জনক। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, নতুন নতুন সুর ও বিচিত্র গানের বাণী, দার্শনিক চিন্তাসমৃদ্ধ প্রবন্ধ, এমনকি চিত্রকলায়ও রবীন্দ্রনাথ চিরনবীন, চিরঅমর।
রবীন্দ্রনাথ আজও আমাদের মনমানসিকতা গঠনের, চেতনার উন্মেষের প্রধান অবলম্বন। আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ’ নামের বানানটিও আমরা তার কাছ থেকে পেয়েছি। বাঙালির যাপিত জীবনাচরণের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে।
বাংলা সাহিত্যকে তিনি বিশ্বের দরবারে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছেন। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে তিনি প্রথম এশীয় হিসেবে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। দেশজ শিক্ষা ব্যবস্থা বিকাশের লক্ষ্যে গড়ে তোলেন শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি একজন সমাজসংস্কারকও ছিলেন। গ্রামীণ সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কৃষির উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি।
বাংলায় আলু, ভুট্টা ইত্যাদি চাষের সূচনা ঘটে তারই উদ্যোগে। দরিদ্র কৃষককে ঋণ দেয়ার লক্ষ্যে নোবেল পুরস্কারের অর্থে কৃষি ব্যাংকের কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘নাইট’ উপাধি দিলেও ১৯১৯ সালে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে ব্রিটিশ বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
Leave a reply