জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে ভার্চুয়াল ভাষণে করোনার ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সব দেশ যেনো একইসঙ্গে টিকা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষণে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে কড়া বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের সৃষ্টি, সংকটের সমাধানও করতে হবে মিয়ানমারকেই।
এর আগে ১৬ বার জাতিসংঘের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেও, মহামারির ভিন্ন পরিস্থিতিতে এ বছর ভার্চুয়ালি সাধারণ অধিবেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পিতার মতোই এবারও তিনি ভাষণ দিয়েছেন বাংলায়।
বাংলাদেশে সময় রাত ৮টায় প্রচারিত এই রেকর্ডকৃত বক্তব্যে সমসাময়িক বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে সমন্বিতভাবে। এজন্য ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে সমতা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাকালেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে। বৈশ্বিক মন্দা কাটাতে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপও করেছেন তিনি। উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তারা যেনো অভিবাসীদের প্রতি সহমর্মিতা দেখান। এ সময় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং কর্মহীন প্রবাসী শ্রমিকদের সহযোগিতায় বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তিনি তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ প্রমাণ করেছে, আমাদের সকলের ভাগ্য একই সূত্রে গাঁথা। আমরা কেউই সুরক্ষিত নই, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছি। এই ভাইরাস আমাদের অনেকটাই ঘরবন্দি করে ফেলেছিল। যার ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বাংলাদেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.২ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ আমাদের এই অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ বিস্তারের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য আমরা তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তার ব্যবস্থা নিয়েছি। এতে ১০ মিলিয়নের বেশি পরিবার উপকৃত হয়েছেন। আমরা ৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছি। করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, শ্রমিক ও দিনমজুরসহ ৫ মিলিয়ন মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গ্রাম পর্যায়ের প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র হতে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা করোনাকালে খাদ্য উৎপাদনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। সেই সঙ্গে পুষ্টি নিশ্চয়তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের শিল্প কারখানা সচল রাখা এবং কৃষি ও শিল্পপণ্য যথাযথভাবে বাজারজাতকরণের বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। যার ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি এখনও তুলনামূলকভাবে অনেক ভাল আছে।’
তিনি আরও বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বব্যাপী উৎপাদনে স্থবিরতা সত্ত্বেও ৫.২৪ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশে উন্নীত হবে বলেও আশা করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন বিশ্ব শিগগিরই কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন পাবে। এই ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। সকল দেশ যাতে এই ভ্যাক্সিন সময় মত এবং একইসঙ্গে পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। কারিগরি জ্ঞান ও মেধাস্বত্ব প্রদান করা হলে, এই ভ্যাকসিন বিপুল পরিমাণে উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে।
ইউএইচ/
Leave a reply