মার্কিন নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট পদ নিয়ে এখন প্রশ্ন- ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি এই ফলাফল না মানেন, তাহলে কী তিনি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে পারবেন? কী বলছে মার্কিন আইন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতো বিরোধই হোক সংবিধানিকভাবে ২০ জানুয়ারিই শেষ হবে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের মেয়াদ। ফলাফল নিয়ে বিরোধের সুরাহা না হলে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার।
নির্বাচনের পেরিয়েছে দু’সপ্তাহ, অথচ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে চলছে ট্রাম্প সমর্থকদের সমাবেশ। নির্বাচনে হারলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঝুলিতে আছে প্রায় ৭ কোটি ৩১ লাখ ভোট। বিপুল সমর্থন পাওয়ায় ট্রাম্পের মতোই পরাজয় মানতে নারাজ তার সমর্থকরা।
মার্কিন রাজনীতির ঐতিহ্য আর গণতান্ত্রিক রীতি মেনেই ফল মেনে নেন পরাজিত প্রার্থী। কিন্তু ২৪৪ বছরের ইতিহাসে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের হোয়াইট হাউজ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানানোর ঘটনা নজিরবিহীন।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত সরকারের চিফ অব স্টাফ রন ক্লাইন জানান, “নির্বাচনে জো বাইডেন জিতেছেন এবং সেটা কোনো কারচুপির মাধ্যমে হয়নি। ভোট বেশি পেয়েছেন বলেই জিতেছেন। যেমন পপুলার ভোট বেশি পেয়েছেন, তেমন ইলেক্টোরাল ভোটও বেশি পেয়েছেন। চার বছর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এভাবেই ক্ষমতায় এসেছিলেন। তার আজকের বাস্তবতা না মানতে পারায় বাস্তবতা বদলাবে না।”
সাংবিধানিকভাবে বাইডেনের দায়িত্বগ্রণ ঠেকানো অসম্ভব। এরপরও, ফল প্রত্যাখ্যান করে ট্রাম্পের একের পর এক টুইট বাড়াচ্ছে অনিশ্চয়তা। ভোট কারচুপির অভিযোগে হয়েছে কয়েকশ’ মামলাও। বিশ্লেষকরা বলছেন, অগণতান্ত্রিক পথে হাঁটলেও ট্রাম্পের পক্ষে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা কঠিন হবে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিশেষজ্ঞ এলি হনিগ জানান, ”খেয়াল করে দেখুন- ট্রাম্পের অভিযোগের বেশ কয়েকদিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু ভোট জালিয়াতির বিষয়ে কোনো প্রমাণ মেলেনি। এমনকি ট্রাম্প শিবিরের পক্ষ থেকে যেসব মামলা করা হয়েছে সেগুলোও ভিত্তিহীন। এসব মামলা কিংবা অভিযোগের পক্ষেও কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। তাই আইনী হোক কিংবা অগণতান্ত্রিক, কোনোভাবেই ট্রাম্পের আর ক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই।”
কংগ্রেসে ভোটের বিধান থাকলেও তা সম্ভব কেবল দু’নেতার ইলেক্টোরাল ভোট সমান হলেই। সে সম্ভাবনা কম বলে কংগ্রেস থেকে বিরোধ গড়াতে পারে সুপ্রিম কোর্টে। ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের আগে বিষয়টির নিষ্পত্তি হতে হবে। অন্যথায়, অন্তবর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।
নবনির্বাচিত সরকারের চিফ অব স্টাফ আরও জানান, “বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হওয়া না হওয়ার সিদ্ধান্ত জনগণের। ট্রাম্প কী টুইট করছেন, সেটার ওপর কিছু নির্ভর করছে না। করোনা মহামারির এই সময়ে দেশ আগেই সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশকে নতুন সংকটে পড়া থেকে বাঁচাতে ক্ষমতার পালাবদল সুষ্ঠুভাবে হওয়ার বিকল্প নেই।”
উল্লেখ্য, ৮ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফল নিশ্চিত করবে রাজ্যগুলো। যার ওপর ১৪ ডিসেম্বর বসবে ইলেক্টোরাল কলেজ। পপুলার ভোটে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে, মিশিগান, উইসকনসিন ও পেনসিলভানিয়ার রিপাবলিকান সমর্থক প্রশাসন নিজেদের মতো করে ইলেক্টোরাল দিতে পারেন। কিন্তু জনমত উপেক্ষা করে এ পথে হাঁটতে হবে একসাথে অন্তত কয়েকটা রাজ্যকে। যা হবে নজিরবিহীন।
Leave a reply