ভর্তি পরীক্ষায় একের পর এক ব্যর্থ হয়ে নেমে পড়লেন চা বিক্রিতে। এতেই কোটিপতি হয়ে গেলেন এক তরুণ। ভারতের মধ্যপ্রদেশে এ ঘটনা ঘটেছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
দেশের প্রথম সারির বিজনেস স্কুলে ভর্তি সুযোগ না পাওয়াতেই যেন কপাল খুলে গেল প্রফুল বিল্লোর নামে ওই তরুণের। স্বপ্ন ছিল, বড় বিজনেস স্কুলে পড়ে ভালো একটি ক্যারিয়ার গড়বেন। কিন্তু ভাগ্য তাকে নেমে নিয়ে আসে রাস্তায়, চা বিক্রিতে।
তবে ব্যর্থতাই জীবনকে অন্যভাবে দেখতে শিখিয়েছিল। আজ বিশ্বের প্রথম সারির বিজনেস স্কুলের শিক্ষার্থীদের সামনে ভাষণ দেন তিনি। কীভাবে উদ্যোক্তা হতে ওঠতে হয় সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
তিন তিনবার ভর্তি পরীক্ষা ব্যর্থ হয়ে ২০১৪ সালে এসে সিদ্ধান্ত নেন, এবার জীবনকে নিয়ে অন্যভাবে ভাববেন তিনি। বাবার থেকে টাকা নিয়ে ভারতের বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়াতে শুরু করলেন। কিন্তু কতদিনই বা এভাবে কাটানো সম্ভব! এমবিএ করার ইচ্ছা ততদিনে মুছে ফেললেও বাড়িতে সেটা জানানোর সাহস ছিল না।
শেষে আহমেদাবাদে এসে তিনি নিজের কিছু শুরু করার মনস্থির করলেন। প্রথমে ম্যাকডোনাল্ডের আউটলেটে ইন্টারভিউ দিয়ে একটা কাজ শুরু করলেন। সারাদিন ধরে ঝাড়ু দিতেন আউটলেটে। কখনও কখনও ক্রেতাদের থেকে অর্ডারও নিতেন এবং খাবার পরিবেশন করতেন। এভাবেই চলছিল। উপার্জনও হচ্ছিল। কিন্তু মনের শান্তি ছিল না। জীবন নিয়ে আক্ষেপ কিছুতেই কাটছিল না। নিজের কিছু করার ইচ্ছা থেকেই চা বিক্রির কথা মাথায় আসে তার।
আহমেদাবাদের এক এমবিএ কলেজে ভর্তি হওয়ার কথা বলে বাবার কাছ থেকে ৮ হাজার রুপিও জুটিয়ে নেন। ওই টাকায় কেটলি, কাপ, ট্রে এবং চা তৈরির সমস্ত পণ্য কিনে পরদিন থেকেই রাস্তায় বিক্রি করতে শুরু করেন।
প্রথম দিন কোনও গ্রাহক পাননি। পরদিন ফের রাস্তায় দোকান দিলেন। এবার নিজে গ্রাহকের কাছে চলে যেতে শুরু করলেন। গ্রাহকের কাছে গিয়ে অর্ডার নেওয়া এবং তাদের হাতে চা পৌঁছে দিলেন।
ইংরেজি বলা চাওয়ালাকে পছন্দ করতে শুরু করলেন মানুষ। প্রথম দিন ৫ জন গ্রাহক, পর দিন ২০ জন, তার পর দিন ১০০ জন। এভাবে ক্রমে বাড়তে থাকে বিক্রি। দু’সপ্তাহের মধ্যে আশপাশের চা বিক্রেতাদের ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠলেন প্রফুল।
ফলে জোর করে তার দোকান তুলে দেওয়া হল। পরের কয়েক সপ্তাহ আর দোকান দিতে পারেননি তিনি। সে সময় গ্রাহকেরাই তাকে খুঁজতে শুরু করলেন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন অনেকে।
ফের চায়ের কেটলি নিয়ে আহমেদাবাদের অন্য জায়গায় দোকান দেন প্রফুল। এবার এক হাসপাতালের ভেতর দোকান দেন। প্রতি মাসে এক হাজার টাকা ভাড়াও দিতেন। প্রফুল শুধু চা বেচতেন না, গ্রাহকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের নিত্যনতুন ভাবনা নিয়ে হাজির হতেন।
এর মাঝে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বাবাকে মিথ্যা বলে ফের ৫০ হাজার রুপি চেয়ে নিয়েছিলেন। বাবা জানতেন, ছেলে এমবিএ কলেজে ভর্তি হয়েছেন। বাবা যাতে তার ব্যবসায় বাধা হয়ে না দাঁড়ান তাই এক কলেজে ভর্তি হয়েও যান প্রফুল। কিন্তু কয়েকদিন ক্লাস করার পর আর কলেজের আঙিনায় পা রাখেননি।
নিজের দোকানের নাম দিলেন ‘এমবিএ চাওয়ালা’। এমবিএ-র পুরো অর্থ মিস্টার বিল্লোরে আহমেদাবাদ। বিল্লোরে তার পদবি। অনেকেই বুঝতে পারতেন না এর প্রকৃত অর্থ। চাওয়ালা তাও আবার এমবিএ! এমবিএ করে চা বিক্রি! এসব নানা কথা নিয়ে হাসাহাসিও করতেন। তাতে ব্যবসায় কোনও প্রভাব পড়েনি যদিও।
আহমেদাবাদে ৩০০ বর্গ ফুটের দোকান রয়েছে প্রফুলের। তাতে এখন ২০ জন কর্মচারী কাজ করেন। সেরা বিজনেস স্কুলে ভর্তি না হয়েও প্রফুল আজ কোটিপতি। ২০১৯-২০ সালে ব্যবসা থেকে আয় করেন ৩ কোটি রুপি।
প্রফুলের এ গল্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সংবাদমাধ্যম সবখানেই ছড়িয়ে পড়ে। তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে নজির গড়েন তিনি, তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রতিষ্ঠিতরা। অনেক নামীদামী মানুষও এখন এমবিএ চাওয়ালার নিয়মিত গ্রাহক।
শিক্ষার্থীদের সামনে ভাষণ দিতে আইআইএম কিংবা হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে প্রায়ই ডাক পান প্রফুল এখন। তার কাহিনী মনোবল বাড়ায় শিক্ষার্থীদের।
Leave a reply