কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার মদদে প্রকাশ্যে সাংবাদিক আনিছুর রহমানের পরিবারের ভোগ দখলীয় ও রেকর্ড ভুক্ত জমির ফসল কেটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার সকালে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের যাদুরচর পূর্বপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার আবুল কালাম বাদি হয়ে রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়ন
ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সাহাদৎ হোসেনসহ ৮ জনের নাম দিয়ে রৌমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
রৌমারী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমাছ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ পেয়ে শুক্রবার রাতে ওই ফসলি জমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে মীমাংসার লক্ষ্যে দুই পক্ষকেই কাগজপত্র নিয়ে রোববার সকাল ১০টায় থানায় হাজির
হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিবাদিরা তা না মেনে শনিবার সকালে ক্ষেতের সব সরিষা তুলে নিয়ে গেছে।
সাংবাদিক আনিসুর রহমান জানান, তার চাচা আবুল কালাম পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ১৫শতক জমি দীর্ঘ ৫৩ বছর ১৯৬৮ সাল থেকে খাজনা দিয়ে ভোগদখল করে আসছেন। যার আরএস খতিয়ান নং ২২৪৯, হোল্ডিং ২২৪৯, দাগ নং ২২১৯। যাদুরচর পূর্বপাড়া এলাকার মৃত কেরামত আলীর ছেলে আবুল ফজল তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জোরপূর্বক ক্ষেতের সব সরিষা তুলে নিয়ে যাবে বলে আগে থেকেই হুমকি দিয়ে আসছিলো।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই রৌমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। থানায় লিখিত অভিযোগ দেবার পরও শনিবার সকালে আবুল ফজলের নেতৃত্বে ৪০/৫০ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত এলাকায় ভয়ভীতি সৃষ্টি করে আমাদের জমির সরিষা তুলে নিয়ে যায়।
জমির মালিক আবুল কালাম অভিযোগ করে বলেন, তার এ রেকর্ডিয় ও ভোগদখলীয় জমিটি অবৈধভাবে আবুল ফজল গংদেরকে দখলে নিতে, বিভিন্ন ভাবে উস্কানি-মদদ দিয়ে যাচ্ছেন রৌমারী সদর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সাহাদৎ হোসেন।
তিনি আরও বলেন,আবুল কালাম গংদের রেকর্ডভুক্ত ও ভোগদখলীয় ১৫শতক জমি যাদুরচর
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সাহাদৎ হোসেন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ২০১৭ সালে একই এলাকার আবুল ফজল গং’র নামে নামজারি করে দেন।
পরবর্তীতে আমরা মিস কেস দায়ের করলে ২০২০ সালে আবুল ফজল গং’দের নামের নামজারি মামলাটি বাতিল করা হয়। এরপর তহশিলদার সাহাদৎ হোসেন রৌমারী সদর
ইউনিয়নে বদলি হন। একই বছরে যাদুরচর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্ব পান ওই তহশিলদার। পুনরায় টাকার নিয়ে এই জমিটি পুনরায় ডিসেম্বর মাসে আবুল ফজল গং’র নামে নামজারি করে দেন তহশিলদার।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল ওয়াহেদ (৬৫) জানান, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সাহাদৎ হোসেন সরেজমিন মাঠ পরিদর্শন, জরিপ না করে অফিসে বসে মনগড়া তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি ও প্রস্তাব দিয়ে অবৈধ পন্থায় নামজারি করে দেবার কারণে জমি নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। ওই তহশিলদার থাকাকালীন সময়ে অনেক গরিব মানুষের জমিজমা সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি করে গেছেন।
অভিযুক্ত রৌমারী সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী সাহাদৎ হোসেন উস্কানি দেবার কথা অস্বীকার করে বলেন, আবুল ফজল গং যা করছেন তা আইন মেনে করছেন। জমি তাদের দখলে থাকায় সরিষা তুলে নিয়ে গেছে। এছাড়াও বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান বলেন, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সঠিক তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
রৌমারী থানার ওসি মোন্তাছের বিল্লাহ জানান, এ ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। জমি থেকে কেটে নেওয়া সরিষা জব্দ করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
Leave a reply