আখাউড়া প্রতিনিধি :
হারিয়ে যাওয়ার ১৩ বছর পর বোনকে আর ৮ বছর পর ভাইকে ফিরে পেলো নিজ পরিবার। শুক্রবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরাস্থ আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার ও আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্ব-স্ব পরিবারের কাছে তাদের হস্তান্তর করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিটগর ইউনিয়নের গুড়িগ্রাম থেকে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে মানসিক ভারসাম্যহীন শায়েস্তারা বেগম হারিয়ে যান। অন্যদিকে, ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঝুমারকান্দা গ্রাম থেকে হারিয়ে যায় মানসিক ভারসাম্যহীন সমীর মজুমদার। দুই বছর আগে মানবাধিকার কর্মী খাইরুল কবীরের মাধ্যমে তাদের পরিবার খোঁজ পায় পাশের দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মডার্ন সাইক্রেটিক হসপিটালে (মানসিক হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন রয়েছেন ওই দু’জন। তার সুস্থ আছেন এবং ওরা বাড়িতে ফিরতে চায়।
এ নিয়ে দুই দেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি চালাচালির দীর্ঘ ১৩ বছর এবং ৮ বছর পর সীমান্ত পেরিয়ে শুক্রবার আপনালয়ে ফিরেছেন শায়েস্তারা বেগম ও সমীর মজুমদার।
এতো বছর পর স্বজনরা কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতা আর বাঁধভাঙ্গা খুশি যেন কোনো বাধাই মানছিল তাদের। সকাল থেকেই ত্রিপুরা সীমান্তের এপারে আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের নো-ম্যান্সল্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন পরিবারের স্বজনরা। অপেক্ষার প্রহর ভেঙ্গে দুপুর ঠিক সোয়া ১টার দিকে ভারতের ত্রিপুরাস্থ আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার জোনায়েদ হোসেন শায়েস্তারা ও সমীরকে সঙ্গে করে আখাউড়া-আগরতলা নো-ম্যান্সল্যান্ডে নিয়ে আসেন। নোম্যান্সল্যান্ডে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর এ আলমের মাধ্যমে নিজ পরিবারের কাছে তাদের দু’জনকে তুলে দেন। সুস্থ হয়ে আসা শায়েস্তারা ও সমীরের স্বজনরা পরম আদরে বুকে টেনে নেন তাদের।
শায়েস্তারা বেগমের বড় ভাই ফজলুল হক ও সমীর মজুমদারের ছোট ভাই অমির মজুমদার অসিম বলেন, নিখোঁজ হওয়ার পর অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তারপরও আশা ছাড়েননি তারা। মাঝেমধ্যে নানা স্থানে খুঁজতেন তাদের। হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের বুকে পেয়ে খুশি উভয় পরিবার।
ভারতের ত্রিপুরাস্থ আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার জোনায়েদ হোসেন বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা শহর থেকে ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এবং ২০০৮ সালের ১৯ জানুয়ারি রাজ্যের পুলিশ তাদেরকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় আটক করে এবং আদালতের নির্দেশে আগরতলা নরসিংগড় মডার্নসাইক্রেটিক হসপিটালে (মানসিক হাসপাতাল) ভর্তি করানো হয়। সেখানেই তারা এতদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়ায় ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সহায়তায় শুক্রবার দুপুরে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
তবে কোন সীমান্ত পথে তারা ভারত প্রবেশ করেছে সঠিক তথ্য দিতে পারেনি কেউ।
ত্রিপুরার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন ফিরে পাওয়া স্বজনদের পরিবার।
প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেন, হারিয়ে যাওয়া স্বজনকে ফিরে পাওয়া অনেক বড় আনন্দের। ওদের কাছে পেয়ে আমরা আবেগাপ্লুত, খুশি। বাংলাদেশ-ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ সময় নো-ম্যান্সল্যান্ডে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর এ আলম, আখাউড়া বিজিবি কোম্পানি কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলম, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা মূর্শেদুল হক এবং ত্রিপুরার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার জোনায়েদ হোসেন ছাড়াও সহকারী কমিশনের প্রথম সচিব (স্থানীয়) এস এম আসাদুজ্জামান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইউএইচ/
Leave a reply