গাইবান্ধায় সেই কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়েই আদালতে মা রোকসানা

|

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

মেয়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার অপরাধে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হওয়া গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের মা রোকসানা বেগম তার তের দিন বয়সের সেই কন্যা সন্তানকে কোলে নিয়ে আদালতের কাছে প্রতিকার দাবি করেছেন। একইসাথে নির্যাতনের অভিযোগ স্বামী রাজা মিয়া, শ্বশুর ও শাশুড়িসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন রোকসানা খাতুন।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে গাইবান্ধার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে উপস্থিত হয়ে মামলার আবেদন করেন রোকসানা খাতুন। আদালতের বিচারক আবদুর রহমান শুনানি শেষে মামলাটি সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

বাদি রোকসানা খাতুনের আইনজীবী অ্যাড. হাসিবুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিয়ের পর থেকেই যৌতুক দাবিসহ নানা কারণে রোকসানাকে নির্যাতন করে স্বামী রাজাসহ তার পরিবারের লোকজন। এরপর রোকসানা গর্ভধারণ করলে তার শারীরিক পরীক্ষা করে কন্যা সন্তানের বিষয় অবগত হয় স্বামী রাজা মিয়া। এতে ছেলে সন্তানের আশা করা স্বামী রাজা মিয়াসহ তার বাবা-মা রোকসানাকে নির্যাতন ছাড়াও বাড়ি থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করেন।

গত ৮ মার্চ রংপুরের একটি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন রোকসানা। গত ১১ মার্চ সন্তান কোলে নিয়ে স্বামী রাজার বাড়িতে গেলে রোকসানাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি শ্বশুর-শাশুড়ি। বিকেলে পর্যন্ত বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা রোকসানাকে তার শাশুড়ি জানিয়ে দেয় তালাক দেয়ার কথা। পরে রোকসানা জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-নম্বরে কল করে পুলিশের সহায়তা চায়। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে বাবার বাড়িতে রেখে যায়।

তিনি আরও জানান, নবজাতক সন্তানসহ রোকসানাকে তাড়িয়ে দেওয়া, যৌতুক দাবিসহ নানা কারণে তাকে নির্যাতন করে স্বামী রাজাসহ পরিবারের লোকজন। এ নিয়ে রোকসানা খাতুন বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ) ধারায় আদালতে মামলার আবেদন করেন। মামলায় স্বামী রাজা মিয়া, তার বাবা মহব্বর আলী, মা আছমা বেগম, বড় ভাই আশরাফুল ও তার স্ত্রী আইরীন বেগমকে আসামি করা হয়। পরে বিচারক শুনানি শেষে মামলা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। আগামী ২১ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত।

আদালতে মামলার পর রোকসানা বেগম গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, বিয়ে সংসার ও সন্তান জন্মের পরেও স্বামীর বাড়িতে জায়গা হয়নি। ফলে শিশু সন্তানকে নিয়ে দরিদ্র বাবার বাড়িতে অবস্থান করছি। সন্তানের স্বীকৃতি দিতে নারাজ, যৌতুকসহ নানা কারণে নির্যাতন এবং সর্বশেষ তালাক দেওয়ার ঘটনায় প্রতিকার দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। এমন ঘটনায় স্বামী রাজাসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কঠোর শাস্তির দাবিও জানান তিনি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply