(কিম জং ইয়াংয়ের পাশাপাশি গ্যালারিতে বসলেও তার সাথে ডিনার করতে অস্বীকৃতি জানান মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স)
শীতকালীন অলিম্পিককে ঘিরে সৌহার্দ্যের হাওয়া বইছে দুই কোরিয়ার সম্পর্কে। খেলার কূটনীতির সাফল্যে পুনর্মিলনের স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছেন অনেকে। অভিন্ন পতাকার অধীনে শুক্রবার গেমসের উদ্বোধনী প্যারেডে অংশ নেয় উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার অ্যাথলেটরা। এর কয়েক ঘন্টা পর শনিবার এক টেবিলে বসেন দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। ঐতিহাসিক এ বৈঠকে দক্ষিণ কোরীয় প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলেন কিম জং উনের বোন।
কিন্তু দুই চির বৈরী প্রতিবেশির মধ্যে এমন দহরম মহরমে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে ওয়াশিংটনে। গত কয়েক মাস ধরে কিম জং উনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এসব হুমকিতে দমে যায়নি পিয়ংইয়ং। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু পরীক্ষা চালিয়ে গেছে গত বছরজুড়ে।
অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সিউলে আছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তিনি সেখানে উত্তর কোরীয় নেতার বোন কিম জং ইয়াং’কে এড়িয়ে চলছেন। শুক্রবার রাতে ইয়াংয়ের সাথে ডিনারে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানা তিনি। শনিবার পেন্স অভিযোগ করেছে, উত্তর কোরিয়া চলতি অলিম্পিককে তাদের প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর উপলক্ষ হিসেবে ব্যবহার করছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এসব অস্বস্তিকে অতোটা গুরুত্ব দিচ্ছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইন। তিনি কিম জং ইয়াংকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে করমর্দন করেছেন। দুই দেশের নেতাদের মধ্যে দ্পিক্ষীয় বৈঠকেও ছিলো সৌহার্দের প্রদর্শনী।
বার্তা সংস্থা এপি এক বিশ্লেষণমূলক নিবন্ধে বলেছে, দুই কোরিয়ার এমন সম্প্রীতিতে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা অযাচিত হয়ে ওঠেছে।
৯২ দেশের আড়াই হাজার অ্যাথলেট অংশ নিচ্ছেন। এ যাবতকালের বৃহত্তম শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনটাও হলো দেখার মতো। তবে এবারের প্রতিযোগিতায় খেলা যেন একান্তই গৌণ বিষয়। সবকিছু ছাপিয়ে বারবারই আলোচনায়, দুই কোরিয়ার ‘খেলা কূটনীতি’। যার দৃশ্যমান রূপ দেখা গেলো উদ্বোধনী প্যারেডে।
অভিন্ন পতাকা নিয়ে স্রেফ ‘কোরিয়া’ পরিচয়ে, ২৩তম শীতকালীন অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া। দর্শক সারিতেও সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান দু’দেশের। কাগজে-কলমে যুদ্ধের ময়দানে থাকা দেশ দুটির এমন সম্প্রীতিতে উচ্ছ্বসিত অলিম্পিক কমিটি।
কমিটির চেয়ারম্যান থমাস বাক বলেন, দীর্ঘদিনের পরিশ্রম এবং সমঝোতা আলোচনার পর দেখা মিললো আবেগঘন এই মুহূর্তের। আমার বিশ্বাস, অভিন্ন পতাকা হাতে দুই কোরিয়ার প্যারেড পুরো বিশ্বকে শিহরিত করেছে।
বিশ্লেষকদের আশা, অলিম্পিকের পরও বহাল থাকবে আলোচনার ধারা। সমঝোতার মাধ্যমে যুদ্ধপূর্ব মানচিত্রে ফেরার স্বপ্নও দেখছেন অনেকে।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন বলেন, স্মরণীয় এ উদ্যোগ দুই কোরিয়ার মধ্যে আরও অর্থবহ এবং অকৃত্রিম আলোচনার সুযোগ করে দেবে বলেই আমার প্রত্যাশা। এটা উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ায় আঞ্চলিক উত্তেজনা কমিয়ে পুর্নমিলনের পথ মসৃণ করবে। খেলা পরবর্তী সৌহার্দ্য বজায় থাকার ব্যাপারেও আমার মতো অনেকে বেশ আশাবাদী।
Leave a reply