টুইট কিংবা স্ট্যাটাস দিয়ে একের পর এক ঝামেলায় পড়ছেন আলোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সবশেষ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের প্রতি বিষোদগার করে স্ট্যাটাস দিয়ে সেটি আবার মুছে দিয়েছেন। এক স্ট্যাটাস এডিট করেছেন ১৫ বার!
কয়েকদিন আগেই ইংলিশ ক্রিকেটার মঈন আলীকে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছিলেন তসলিমা নাসরিন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে লিখেছিলেন মঈন আলী যদি ক্রিকেটার না হতেন তাহলে ‘জঙ্গি’ হতেন। এর পরেই শুরু হয় তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে সমালোচনা। নাসরিন উঠে আসেন লাইম লাইনে।
তবে টিকতে পারেননি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোপের মুখে পড়েন তসলিম। জেফরা আর্চারসহ একাধিক ইংলিশ ক্রিকেটার কড়া ভাষায় জবাব দিয়েছেন তার টুইটের। শেষ পর্যন্ত এই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন তসলিমা।
সেই ইংলিশ ক্রিকেটারদের মধ্যে একজন ছিলেন সাকিব মাহমুদ। তিনি তার টুইটে লিখেছিলেন ‘ডিজগাস্টিং টুইট, ডিজগাস্টিং ইন্ডিভিজুয়াল’। সাকিবের টুইটের নিচে ইংলিশ আরেক ক্রিকেটার স্যাম বিলিংস লিখেছেন, দয়া করে আপনারা তসলিমা নাসরিনের অ্যাকাউন্টে রিপোর্ট করুন।
কিন্তু এখানেই আরেক বিপত্তি বাঁধালেন তসলিমা। সেই ইংলিশ ক্রিকেটারকে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান ভেবেই কিনা ফেসবুকে তাকে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেছেন তসলিমা নাসরিন।
তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের দ্বিতীয় অংশে তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিবও বেশ এবিউজ করলেন আমাকে। ‘ডিজগাস্টিং টুইট, ডিজগাস্টিং ইন্ডিভিজুয়াল’। এর মানে আমার টুইট যেমন খারাপ, আমি মানুষটাও তেমন খারাপ। সাকিব কিন্তু কলকাতায় দুর্গাপূজোর উদ্বোধন করতে গিয়ে বাংলাদেশের মুসলিম মৌলবাদিদের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন, তখন কিন্তু ওদের আক্রমণকে ডিজগাস্টিং বলেননি, ওদেরকেও ডিজগাস্টিং বলেননি। আমি তখন সাকিবের পক্ষ নিয়ে কলাম লিখেছিলাম, সাকিবের অধিকার আছে যে খানে খুশি যাওয়ার, যা কিছু উদ্বোধন করার, সাকিবকে কৈফিয়ত দিতে হবে কেন।
আর সাকিব কী করলেন, যারা ওঁকে আক্রমণ করেছিল, তাদের কাছে করজোরে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন, বললেন, তার পূজোয় যাওয়াই উচিত হয়নি, তিনি ইসলামে প্রচণ্ড বিশ্বাসী, এবং ইসলামই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম।
আমাকে আক্রমণ করে তিনি তার সেই আক্রমণকারীদেরই খুশি করলেন। এমন কৌশল যে আমি জানি না, সে কারণে আমি নিজেকে ভালোবাসি আরও একটু বেশি।’
সময় গড়ানোর সাথে সাথে ভুল বুঝতে পেরেই কিনা স্ট্যাটাসটি এডিট করে দিলেন আলোচিত এই লেখিকা। এই এক স্ট্যাটাস তিনি এডিট করেছেন ১৫ বার!
সবশেষ স্ট্যাটাসটি দাঁড়িয়েছে এমন-
‘টুইটারে হাজার হাজার এবিউজ বিরোধী সেনা আমাকে এবিউজ করছে, আমার দোষ কেন আমি মইন আলীকে ‘এবিউজ’ করেছি। এর মানে মইন আলীকে এবিউজ করা ঠিক নয়, আমাকে এবিউজ করা ঠিক। অপমান অসম্মান অত্যাচার জীবনে কম দেখিনি। যত দিন বাঁচি ততদিন দেখতে হবে জানি। ঝাঁকে ঝাঁকে মুসলিম মৌলবাদি, ফেক বাম, আমাকে না-পড়া লোক, আমার কিছুই না জানা লোক, পঙ্গপালের মতো আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে, লক্ষ শকুন যেন জীবন্ত আমাকে খুবলে খাচ্ছে। পকেটমার সন্দেহে গরিব নিরীহ ছেলেকে উন্মত্ত জনতা যেমন পিটিয়ে মেরে ফেলে, সেরকম মনে হচ্ছিল আমার, যেন আমি সেই গরিব নিরীহ ছেলেটি । দোষটা কী ছিল আমার? একটি জোক। আযান পড়লে যে মানুষ খেলার মাঠেই নিজের জায়নামাজ পেতে নামাজ পড়েন, খেলা চলতে থাকলে নাকি আম্পায়ারকে বলে চলেও যান নামাজ পড়তে, বিজয়ের শ্যাম্পেন খুললে দ্রুত সরে যান দূরে, বিয়ার কোম্পানীর লোগো থাকলে সেই জার্সি পরবেন না বলে জানিয়ে দেন, পয়গম্বরের আদেশ মাফিক গোঁফ ট্রিম করতে থাকেন, দাড়ি বড় করতে থাকেন, কোনও মেয়ে-সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিলে মুখের দিকে একটিবারও না তাকিয়ে সাক্ষাৎকার দেন, স্ত্রীকে হিজাব পরান — তাঁকে নিয়ে যদি কৌতুক করিই, তাহলে কি টুইটারের একাউন্ট উড়ে যাবে? হ্যাঁ এমনই থ্রেট এসেছে। আমাকে যারা গতকাল থেকে এবিউজ করছে, তারা তো অনেকেই শার্লি আব্দোকে সমর্থন করে। শার্লি আব্দো তো মস্করা করে বিখ্যাত লোকদের নিয়ে, তাহলে সেটা সমর্থন করে কিভাবে? নাকি ওরা ফরাসি বলে ওদের সমর্থন করা চলে!
মইন আলীকে নিয়ে লেখা টুইট ছিল তিনদিন আগের। সেটি চার হাজারের ওপর লাইক পেয়েছিল, কেউ কিন্তু তখন কোনও অভিযোগ করেনি। হঠাৎ গতকাল কবিতা কৃষ্ণন নামে একজন বামপন্থী আমাকে গালিগালাজ করলেন টুইটটি নিয়ে। অমনি শুরু হয়ে গেল, তথাকথিত বাম এবং মুসলিম মৌলবাদিদের তসলিমা এবিউজ । গালি, গালি এবং গালি। সংগঠিত মৌলবাদিরা আজও চালিয়ে যাচ্ছে এবিউজ। সাধারণ মানুষও এসে কুৎসিত কথা বলে যাচ্ছে। মাঝখানে ইংলেণ্ডের ক্রিকেটাররাও যা নয় তা তো বললেনই, আমার টুইটার একাউণ্ট রিপোর্ট করার জন্যও ভক্তদের বলে গেলেন। ঘৃণার মতো সংক্রামক বোধহয় ডেডলি ভাইরাসও নয়।
কেউ জানলো না আমার স্ট্রাগল, আমার দীর্ঘ বছরের সংগ্রাম। মানবতা, মানবাধিকার, নারীর অধিকার, বাক স্বাধীনতা, সমতার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরবধি আমার লেখালেখি। সবাই মনে করতে লাগলো আমি সারাজীবন ধরে ওই এক লাইনের একটা টুইটই লিখেছি, আমার আর কোনও কন্ট্রিবিউশান নেই, তাই আমাকে শায়েস্তা করা উচিত। মৌলবাদিদের দু’দিন ব্যাপী উৎসব চলছে । কারণ বড় বড় ক্রিকেটার আমাকে গালি দিচ্ছেন, বামপন্থী গালি দিচ্ছেন, নামী দামী লোক গালি দিচ্ছেন, তাদের আনন্দ আর ধরছে না।’
তবে এ বিষয়ে সাকিব আল হাসানের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
Leave a reply