পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
মানবসেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে সকলের দৃষ্টি কেড়েছেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। প্রথমে করোনাকালীন লকডাউন শুরু হবার পর থেকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিনা পয়সায় খেটেখাওয়া দিনমজুরদের জন্য ইফতার সামগ্রী রেখে দিয়ে সকলের দৃষ্টি কেড়েছেন। পর্যায়ক্রমে কখনও রাস্তায় হেটে হেটে রিকশাচালকদের মধ্যে আবার কখনও গরিব অসহায় মানুষের ঘরে গিয়ে বিভিন্ন সামগ্রীসহ দিয়েছেন আর্থিক সহায়তা।
ইতোমধ্যে গত ২১ দিনে অন্তত ১০ হাজার রোজাদার ব্যক্তির মধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছেন। বলছিলাম পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ কাজী আলমগীর হোসেন ওরফে কাজী চাচার কথা।
রোজা শুরু হবার আগে টাউন বহাল গাছিয়া এলাকার আবদুল হাশেম মিয়া নামের ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ প্রথম রোজায় তার বাসায় ইফতার করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। মূলত ওই দিন থেকেই কাজী আলমগীর সিদ্ধান্ত নেন যে, গোটা রমজান মাস হাশেম মিয়ার মত গরিব অসহায় দুখী রোজাদারদের বিনা পয়সায় ইফতার করাবেন। যেই আশা সেই কাজ। ওইদিন থেকেই শুরু হয় কাজী আলমগীরের এই মহতী উদ্যোগ। প্রথম রোজার দিন শহরের প্রবেশ দাড় চৌরাস্তা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের গোলচত্বরে সাজিয়ে রাখেন বিনা পয়সায় ইফতার সামগ্রী। বিকাল ৫টা থেকে রিকশা চালকসহ গরিব অসহায় মানুষ যে যার মত করে ইফতার সামগ্রী সংগ্রহ করেছে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে তার এ মহতী উদ্যোগ।
কাজী আলমগীর বলেন, প্রথম দিন মাত্র ৫০টি প্যাকেট তৈরি করেছিলাম। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে ইফতার শেষ হয়ে যাওয়ায় পরের দিন থেকে প্যাকেটের পরিমাণ বৃদ্ধি করি। এক পর্যায়ে প্রতিদিন একশ, দুইশ, তিনশ এরকম বাড়াতে হয়েছে।
তিনি জানান, শুধু ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেই ক্ষান্ত হই নাই অসহায় নারীদের সেলাই মেশিন, শাড়ি লুঙ্গিসহ ঈদ সামগ্রীও ঘরে ঘরে গিয়ে পৌঁছে দিয়েছি। কখনও একা একা গেছি আবার কখনও ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাও সাথে ছিল। তাও হাতে গোনা দুই তিনজন।
তিনি আরও বলেন, কাউকে জানানোর জন্য কিংবা প্রচারের জন্য নয় সম্পূর্ণ বিবেকের তাড়নায় এবং আল্লাহকে খুশি করার জন্য এ কাজ করেছি। জনপ্রতিনিধি না হয়েও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যে তৃপ্তি পাওয়া যায় সেটা এই কাজ না করলে বুঝতে পারতাম না।
শহরের একটি বিল্ডিংয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের শারিকখালী গ্রামের আনিসুর রহমান ও হাসেম মৃধা জানান, ‘অবরোধে খাবার হোডেল বন্ধ, হ্যারপর বাড়ি যাইতে যাইতে রোজা খোলার সময় থাহে না। হেই জন্য চাচার ফ্রি এফতাইরদা রোজা খুলি। ভাল্লাগতাছে। চাচার জন্য দোয়া হরি। চাচায় হাজী মানুষ আল্লাহ তারে ভাল রাহুক।’
রিকশা চালক বারেক মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি জানান, লকডাউনে শহরে প্যাসেঞ্জার নাই বললেই চলে। যা দুই একজন আছে ভালোমতন টাহাও দেয় না। ছোডোকাল অইতে রোজা থাহার অব্যাশ। হেই জন্য হারাদিন রোজা থাইক্কা বিআলে খোঁজতে থাহি চাচায় এপ্তার দেয় কোনহানে। হেইহানে ছুইট্টা যাই। বিনা পয়সায় করোনার মধ্যে চাচার এই কামে মোরা দারুণ খুশি।
ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি হৃদয় আশিষ জানান, ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে আজ চাচায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও হাজী মানুষ। আমরা ছাত্রলীগের নেতা হিসাবে গর্বিত। চাচার এই মহতী উদ্যোগে তার পাশে থেকে তাকে কিছু সহযোগিতা করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি।
Leave a reply