যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কিউএস বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং ২০২২ প্রকাশ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বুয়েট, কেউই নেই এই র্যাংকিং এ প্রথম ৮০০ এর মধ্যে। এ নিয়ে মতামত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সামাদ, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ ফয়েজুল্লাহ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, এ ঘটনা এখন আর নতুন নয়। প্রতি বছর এমন র্যাংকিং বিপর্যয়ের পর সবাই আক্ষেপ করলেও সেই আঙ্গিকে বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের কর্মকাণ্ড কতটা নতুন করে সাজিয়ে নিতে পারছে সেটা আর দেখা হয় না। তিনি মনে করেন, শিক্ষার্থীদের মাথাপিছু সুযোগ সুবিধার অপ্রতুলতাই ফি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছিয়ে যাবার মূল কারণ। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে তুলনা টেনে সাদ্দাম বলেন, আবাসন সুবিধা থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় কিংবা শিক্ষক- শিক্ষার্থীর অনুপাত, শিক্ষক-কর্মচারীর অনুপাত, কোনো নির্ণায়কেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুবিধাজনক অবস্থানে নেই।
এমন ব্যর্থতার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় দায় দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সারা দেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় যে ছেদ পড়েছে তারই একটা প্রতিফলন হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিং বিপর্যয়কে দেখেন তিনি।
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রমিক অবনমনের কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রাজনীতিকরণ ও শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিকে প্রধান বলে মনে করেন। যোগ্য ব্যক্তিরা প্রশাসনে না আসায় আজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ উঠছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ব্যাপারে বিতর্ক ও দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে নুর প্রশ্ন তোলেন, একজন উপাচার্য কীভাবে তার ছেলেকে দেড় কোটি টাকার গাড়ি কিনে দেয়? তিনি আরো বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুজন নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হলেও একই ঘটনায় অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কিছুই হয়নি।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ ফয়েজুল্লাহ অবশ্য কিউএস র্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখার আশাটিকেই অবান্তর বলে মনে করেন। তার মতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে কেবল সার্টিফিকেট বিতরণের দায়িত্বই পালন করছে। শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত বিসিএসমুখীতাই এর বড় প্রমাণ। এর কারণ হিসেবে তিনি বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকে অবহেলা ও শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটকেই বড় করে দেখেন। তিনি বলেন, এই সংকট আরো স্পষ্ট হয় যখন শিক্ষকরাও গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় নেন। এ ছাড়া করোনা মহামারীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনো গবেষণাই করেনি বলে উল্লেখ করেন ফয়েজুল্লাহ।
সকল অভিযোগের পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মুহম্মদ সামাদ প্রথমেই রবি ঠাকুরের ভাষায় বলেন, ভালো মন্দ যাহাই আসুক, সত্যেরে লও সহজে। র্যাংকিং এর সত্যকে গ্রহণ করেই সামনে এগিয়ে যাবার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বিভিন্ন বিভাগে মাত্রাতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে মনে করেন তিনি। শিক্ষক- শিক্ষার্থীর মিথষ্ক্রিয়ার অভাবে তুখোড় শিক্ষার্থী তৈরি হচ্ছেনা বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, জ্ঞানার্জনের জন্য দরকার আড্ডা। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের সেই দেয়া নেয়া না হবার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান তৈরি হচ্ছে না। প্রতি বছর শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা কমানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন ড. সামাদ। তবে গবেষণায় বরাদ্দ কম থাকার অভিযোগে তিনি বলেন, আইনস্টাইন, নিউটন বা মাদাম কুরির গবেষণার জন্য তো বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা লাগেনি। তবে বর্তমানে সুযোগ তৈরি হওয়ায় গবেষণায় বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। করোনার কারণে সেই অর্থ বিতরণে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির ব্যাপারে ড. সামাদ বলেন, আর্টস এবং সোশ্যাল সায়েন্সে এখনো অনেক ভালো শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করে যাচ্ছেন। সবগুলো হয়তো পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করা হচ্ছেনা। তবে সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতে গবেষণার ক্ষেত্রে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলেও মনে করেন তিনি।
কম শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করার ক্ষেত্রে ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকার দিকেও প্রশ্ন তোলেন ড. সামাদ। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া শুরু হলে সবার আগে ছাত্র সংগঠনগুলোই এর বিরুদ্ধে মিছিল করবে। তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ব্যক্তি হলেন উপাচার্য এবং তার ক্ষমতা প্রায় আটানব্বই ভাগ। এখানে সামগ্রিক টিমওয়ার্কেই কিছুটা ঘাটতি দেখা যাচ্ছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
Leave a reply