সম্প্রীতির বাতায়নের মাঝে হয়তো কেউ মুখ ফসকে ওমন কোনো শব্দ ব্যবহার করবে না আজ। নইলে ইউরো ও বিশ্বকাপের তিক্ত অভিজ্ঞতার ধারাকে থামিয়ে দিয়ে জার্মানিকেই বিদায়ের বিষাদ বরণে বাধ্য করা ইংল্যান্ড ড্রেসিংরুমে সবচেয়ে বেশি আনাগোনা করা অনুচ্চারিত বোধের নামটি হয়তো ‘প্রতিশোধ’।
একেকটা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা আসে আর শুরু হয় ইংলিশ সমর্থকদের ‘ইটস কামিং হোম’ এর আশা। প্রতিযোগিতা শেষও হয় কিন্তু ফুটবল আর ঘরে ফেরে না তাদের। এবার জার্মানদের বিদায় করে সেই লক্ষ্যে বড় একটা পদক্ষেপই নিলো সাউথগেটের শিষ্যরা।
দ্বিতীয়ার্ধের রাহিম স্টার্লিং ও হ্যারি কেইনের গোলে জার্মানিকে ইউরো ২০২০ থেকে বিদায় করে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গেল ইংল্যান্ড। আর ১৯৯৬ সালের ইউরোর ফাইনালে এই জার্মানির বিপক্ষেই টাইব্রেকারে পেনাল্টি মিস করে যে ক্ষতটা সৃষ্টি হয়েছিল বর্তমান ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের হৃদয়ে; তা হয়তো অনেকটাই প্রশমিত হবে আজ।
ওয়েম্বলিতে ইংল্যান্ড ও জার্মানির ম্যাচটি শুরু হয় কিছুটা ঢিমেতালে। প্রথমার্ধ ছিল দুইদলের ডিফেন্সের প্রদর্শনী। প্রথম মিনিট পাঁচেক বল মাঝমাঠে থাকার পর লিওন গোরেস্কার মাধ্যমে প্রথম আক্রমণে যায় জার্মানি। ইংলিশ ডিফেন্স ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে ডেকলান রাইস প্রায় টেনে থামান তাকে। রাইস দেখেন হলুদ কার্ড। ১৬ ও ১৭ মিনিটে বুকায়ো সাকা ও রাহিম স্টার্লিং তাদের গতি ব্যবহার করে দুবার আক্রমণে যান। এবার জার্মান রক্ষণে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে যান ম্যাট হামেলস।
৩৩ মিনিটে কাই হ্যাভার্টজের দারুণ পাস আয়ত্তে নিয়েও পিকফোর্ডের কাছে পরাস্ত হন সার্জ নাব্রির বদলে এই ম্যাচে শুরুর একাদশে খেলা চেলসি ফরোয়ার্ড টিমো ভেরনার। ৪১ মিনিটে হ্যারি ম্যাগুয়ারের হ্যারি কেইনকে উদ্দেশ্য করে বাড়ানো ফ্রিকিক আটকে দেন হামেলস।
তবে ডিফেন্সিভ মাস্টারক্লাসের মাঝেও ম্যাচ সেরা সেইভ নিয়ে আসেন পিকফোর্ড। ৪৮ মিনিটে কাই হ্যাভার্টজের তীব্রগতির শট অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় ফিরিয়ে দেন এভারটনের গোলরক্ষক।
ম্যাচের ডেডলক ৭৫ মিনিটে ভাঙেন রাহিম স্টার্লিং। বল নিয়ে রুডিগারকে পেরিয়ে যান স্টার্লিং; হ্যারি কেইনকে দেন পাস। কেইন সেই বল বাড়ান সাকার বদলী হিসেবে নামা জ্যাক গ্রিয়ালিশের দিকে। গ্রিয়ালিশ দেখেন বামপ্রান্তে ওভারল্যাপ করে উঠে এসেছেন লুক শ। পাস বাড়ান সেদিকে। লুক শ’র নিচু ক্রসকে ধরা জন্য তেড়েফুঁড়ে যান স্টার্লিং ও হ্যারি কেইন। পা বাড়িয়ে গোলপোস্টের ডানকোণা দিয়ে বল জালে জড়ান ম্যান সিটি ফরোয়ার্ড স্টার্লিং। নয়্যার হলেন পরাস্ত আর ওয়েম্বলিতে শুরু হলো লাল ঢেউ।
গোল খেয়ে জার্মানরা মরিয়া হয়ে উঠে সমতা আনার জন্য। আক্রমণের গতি বৃদ্ধি করতে ইয়োখিম লো মাঠে নামান সার্জ নাব্রি ও লেরয় সানেকে। কিন্তু হ্যারি ম্যাগুয়ার ও জন স্টোন্সরা এদিন বাতাসে ছিলেন দুর্দান্ত। আর উইং ব্যবহার করে আক্রমণ করে যাওয়া জার্মানরা ক্রসগুলোকে কাজে লাগাতে পারেনি। তবে ম্যাচে ফেরার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন পরীক্ষিত ক্যাম্পেইনার টমাস মুলার। মাঝমাঠ থেকে আসা ডিফেন্স চেরা পাসকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পিকফোর্ডকে একা পেয়েও মুলার বল পাঠান পোস্টের বাইরে। জার্মানরা হয়তো সে সময়ই বুঝেছিল আজ রাতে তাদের জন্য আর কোন রূপকথা সৃষ্টি হবে না।
তবে তৈরি হলো হ্যারি কেইনের জন্য। গোল পাচ্ছিলেন না বলে তার দিকে ছুটে আসছিল সমালোচনার তীর। অবশেষে খুঁজে পেলেন গোল; নিজেকেও খুঁজে পেলেন যখন সবচেয়ে বেশি দরকার তখনই। ম্যাচের ৮৮ মিনিটে ঘটলো যেন আগের গোলের পুনরাবৃত্তি। আবারও বাম প্রান্ত থেকে এলো ক্রস আর গোলমুখে ছুটে গেলেন কেইন ও স্টার্লিং। পার্থক্য হচ্ছে, এবার ক্রস বাড়িয়েছেন জ্যাক গ্রিয়ালিশ আর ডাইভিং হেডে জার্মানদের ইউরো স্বপ্ন টেমস নদীতে ডুবানোর বাকি কাজটা সারলেন ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন।
Leave a reply