ইউরো দেখানোর নাম করে হচ্ছে মানবপাচার

|

ইউরোর ফ্যান আইডি দেওয়ার আড়ালে করা হচ্ছে মানবপাচার।

ইউরো ফুটবল খেলা দেখানোর নাম করে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেফতার করা হয়েছে চক্রের বাংলাদেশি এজেন্ট আব্দুল আউয়াল ইমনকে। বিশ্বকাপ ও ইউরোর ফ্যান আইডি দিয়ে তারা মানবপাচার করে আসছিলো। চক্রটি চলমান ইউরোর টিকিটের বিপরীতে দেওয়া ফ্যান আইডি দিয়ে দ্বিতীয় দফায় ১৮ বাংলাদেশিকে রাশিয়ায় পাচারের সময় বিমানবন্দর পুলিশ তাদের আটক করে।

এরই মাঝে চক্রের মূল হোতা আব্দুল আউয়াল ইমনকে একদিনের রিমান্ড শেষে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাকে আরেকদফা রিমান্ডে আনা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান।

ফেসবুকে গত কয়েক মাসে ‘নো ফ্লাইট, নো ফি’ শ্লোগান দিয়ে একটি বিজ্ঞাপনী ভিডিও আপলোড করা হয় হেল্পলাইন ট্যুরস এন্ড কনসালটেন্সি ‘এইচটিসি’ নামের প্রতিষ্ঠান থেকে। চমকপ্রদ এসব বিজ্ঞাপনে আগ্রহীদের দেখানো হতো রাশিয়া হয়ে ইউরোপ যাত্রার প্রলোভন।

গেলো রাশিয়া বিশ্বকাপেও টিকিটের বিপরীতে পাওয়া ফ্যান কার্ড দিয়ে রাশিয়া যাওয়া যেত ভিসা ছাড়া। এবার ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ভেন্যু রাশিয়াকে কেন্দ্র করে একই ফাঁদ পাতে মানব পাচারকারী আন্তর্জাতিক একটি চক্র। মূলত, ঠিকঠাক না জেনে তাদের ফাঁদে পা বাড়ায় মানুষ।

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম হেড শরীফুল হাসান বলেন, এই মানুষগুলো যারা যাচ্ছে তারা জানে না কিভাবে তাদের নেওয়া হবে, প্রক্রিয়াটা কী। কিন্তু, দালালচক্র তা খুব ভাল করে জানে। ফলে এসব টুর্নামেন্টের সময়গুলোকে তারা বেছে নেয়।

বেশ ঘটা করে ইউরো ফ্যান আইডি দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রথম দফায় কয়েকজনকে রাশিয়ায় নিয়ে যায়। তবে বিপত্তি বাধে ২য় বার আরও ১৮ জনকে পাচারের সময়। গত ১১ জুন বিকেলে কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে করে মস্কো যাত্রার জন্য বিমানবন্দরে হাজির হয় তারা। সন্দেহ হলে তাদের আটক করে পুলিশ। তাৎক্ষনিক জিজ্ঞাসাবাদে মেলেনি কোনো সদুত্তর। সাথে সাথেই স্থগিত করা হয় তাদের যাত্রা। পরদিন হেল্পলাইন ট্যুরস এন্ড কনসালটেন্সি ‘এইচটিসি’র মালিক আব্দুল আউয়াল ইমনকে আসামি করে মামলা করে বিমানবন্দর পুলিশ।

এসবের মাঝে প্রথম দলের সাথে রাশিয়া সফরে থাকা পাচারকারী দলের মূল হোতা ইমন দেশে ফিরে আসেন ১৮ জুন। বিমান বন্দরেই তাকে আটক করে পুলিশ। এরপর ৩০ জুন মামলাটি কাউন্টার টেররিজম ইউনিটটের (সিটিইউ) হাতে আসে। বিভাগটির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, অধিকতর তদন্ত করে এই মানব পাচার চক্রের মুল উৎপাটন করতে চান তারা।

সিটিইউ এর এই কর্মকর্তা বলেন, এভাবে যারা ফ্যান আইডি দেখিয়ে গিয়েছে তাদের একটি তালিকা ভ ইমিগ্রেশন থেকে পেয়েছি। মূল আসামী আউয়ালকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিলে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।

‘এইচটিসি’র বিজ্ঞাপনে শুরুতে আড়াই থেকে ৩ লাখের মধ্যে রাশিয়ায় খেলা দেখানোর কথা বলা হলেও, যারা সেখানে থেকে যেতে ইচ্ছুক বা অন্যদেশে পালিয়ে যেতে চান, তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা। বৈশ্বিক ক্রীড়া আয়োজনের নামে মানব পাচারের সংঘবদ্ধ চক্র এবার ধরা পড়লেও অতীতে তারা এভাবে শত শত মানব পাচার করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা, এমন তথ্য দিয়েছেন দেশের অভিবাসন বিশেষজ্ঞ শরীফুল হাসান।

অভিবাসন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা শরিফুল হাসান বলেন, কিছু লোক ধরা পড়া মানে হলো এর আগে আরও অনেক লোক চলে গেছেন এবং অনেকেই এই যাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply