বাংলাদেশের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বলেছেন, বাঙালি মাত্রই রক্ষণশীল। তারা যে অঞ্চলের বাঙালিই হোক। নতুন কিছু দেখলেই শিউরে ওঠে সকলে। নতুন কিছুকে এক কথায় আমরা মানতে পারি না। এটা আমাদের সকলের মধ্যেই আছে।
ভারতীয় পত্রিকা দৈনিক আনন্দবাজারকে দেওয়া এক বিশদ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশের সিনেমা ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের সিনেমার প্রচার-প্রসার নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছেন।
নিজের সিনেমা তৈরির শুরুর সময়ের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী আনন্দবাজার পত্রিকাকে বলেছেন, আমি যখন প্রথম দিকে ছবি তৈরির কাজে হাত দেই তখন বাংলাদেশের মানুষ আমার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন। তারা বলেছিলেন আমি সব ভেঙেচুরে নষ্ট করে দিচ্ছি। ওই সময় তারেক মাসুদ একমাত্র মানুষ যিনি দেখিয়েছিলেন, আমার বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবিরা যে অভিযোগ আনছেন সেটা বিশ্ব চলচ্চিত্রের নিরিখে কতটা ভুল। উনি সেদিন আমার পাশে ছিলেন।
বাংলাদেশের প্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ তার সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলেন উল্লেখ করে ফারুকী আনন্দবাজারকে বলেছেন, তারেক মাসুদ আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলেন। গল্প, আড্ডাবাজির মাধ্যমে আমার সিনেমা তৈরির মনকে উনি তৈরি করেছেন। কিন্তু আমাদের ছবি নির্মাণের ধারা সম্পূর্ণ আলাদা।
জনপ্রিয় এই চলচ্চিত্র পরিচালক জানিয়েছেন তিনি তার সিনেমাকে আঞ্চলিক করে রাখতে চান না। তিনি চান তার সিনেমা যেন দর্শকের কান্না আবেগের সাথে মিলে যায়। ফারুকী বলেন, আমি সময়টাকে ধরে রাখতে চাই। কাজের সময় এটাই মাথায় রাখি। তবে প্রথম দিন থেকেই বাংলাদেশের মানুষ আমার ছবি নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে এমন নয়। ছবি মুক্তির সময় বাংলাদেশের দর্শক দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এর কারণ, প্রায় প্রত্যেক ছবিতেই আমি নিজেকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ছুঁড়ে দিই।
সম্প্রতি কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে প্রদর্শিত হওয়া ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ প্রসঙ্গেও পত্রিকাটির সাথে কথা বলেন ফারুকী। এই চলচ্চিত্র পরিচালক বলেন, সাদের ছবি ভাল লাগে আমার। ফেসবুকে কয়েক বার লিখেছি ওকে নিয়ে। তবে বাংলাদেশের ছবি কানে যাবে, ভেনিসে যাবে। আবার যাবেও না। এই যাওয়া না যাওয়া খুব বড় বিষয় নয়। আমাদের সময়টা কাজের মধ্যে দিয়ে তুলে ধরতে হবে। আশার বিষয় বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম এই সময়টা ছবির মধ্যে ধরতে পারছে। সংখ্যায় তারা কম। কিন্তু কাজ হচ্ছে। সময় বদলাচ্ছে। সে কারণেই ধর্ম, সন্ত্রাসবাদ নিয়েও ‘টেলিভিশন’-এর মতো ছবি করতে পেরেছি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিনেমা নিয়ে আলোচনা এই খাতকে অস্থির করে তুলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, শেয়ার আর রেটিং দেখে মানুষ চলচ্চিত্রের মান নির্বাচন করে। ভিউ বেশি, ভাল ছবি। ভিউ কম, খারাপ ছবি। এটাই যদি হত তা হলে বাংলায় সত্যজিৎ রায় তৈরি হত না! তাঁর ছবিও তো সব মানুষ তখন দেখত না। অনেক মানুষ দেখেছে বলে সেই ছবি দেখতে যাবেন না। এটা আমার অনুরোধ।
Leave a reply