বিশিষ্ট লেখক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে নানা সংগঠন ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। পাশাপাশি এমন বর্বর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্টজনেরা।
হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। চিকিৎসাধীন মুহম্মদ জাফর ইকবালের অবস্থার নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছেন তিনি।
শনিবার বিকালে মুহম্মদ জাফর ইকবালকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করে এক যুবক। এতে তাঁর মাথা পিছনে আঘাত লাগে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছে অধ্যাপক জাফর আশঙ্কামুক্ত রয়েছেন।
হামলার নিন্দা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যার উদ্দেশ্যে কাপুরুষোচিত ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
তিনি বলেন, জাফর ইকবালের মতো সকলের শ্রদ্ধাভাজন দেশবরেণ্য শিক্ষকের ওপর এই ধরনের হামলা দেশে অশুভ শক্তির অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির ইঙ্গিত বহন করে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা মনে করি এটা আরেকটা চক্রান্ত। যারা দেশে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়, এটা তাদেরই চক্রান্ত। শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ এবং তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু হামলার তীব্র নিন্দা ও অপরাধীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
এছাড়া বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। হাসান আজিজুল হক বলেন, মৌলবাদীরা কাপুরুষ। তারা পেছন থেকে হামলা করে। সুলতানা কামাল বলেন, মুক্তমনা মানুষদেরকে দমাতেই এমন হামলা করা হয়েছে।
এদিকে হামলার পর পরই শাহবাগে বিক্ষোভ করেছে গণজাগরণ মঞ্চসহ কয়েকটি সংগঠন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমবেত হন গণজাগরণ মঞ্চ ও প্রগতিশীল জোটের নেতাকর্মীরা। ‘সচেতন নাগরিক সমাজ’ ব্যানারে সাংবাদিক-সাহিত্যিকদের একটি দলও প্রতিবাদ জানাতে উপস্থিত হন সেখানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংগঠন ‘শ্লোগান একাত্তর’র সদস্যরাও সেখানে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান।
বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ করেছেন সচেতন নাগরিকরা। আমাদের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, হামলার প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে খেলাঘর জেলা শাখা। মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তারা হামলাকারী ও নির্দেশদাতাদের দ্রুত গ্রেফতার দাবি করেন। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খেলাঘর সভাপতি বিজস সেন রায়, সাংবাদিক শামস শামীম, রাজু আহমদ, রিংকু চৌধুরী প্রমুখ।
বগুড়া ব্যুরো জানিয়েছে, বগুড়া শহরেও প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। জেলার প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী ও শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এসব কর্মসূচি পালন করেন।
বিক্ষোভ হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা রাত ৮টার দিকে শহরের ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত ভাষা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করেন। মিছিল শেষে পথসভায় বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক আব্দুন নূর, জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি কবি জয়দুল হোসেন, জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, সাহিত্য একাডেমির সাধারণ সম্পাদক একেএম শিবলী প্রমুখ।
এছাড়া নেত্রকোনাও বিক্ষোভ হয়েছে।
Leave a reply