লিবিয়ার বিদ্রোহীদের সহায়তা করছে রাশিয়া!

|

রাশিয়ার বিরুদ্ধে লিবিয়ার বিদ্রোহীদের সহায়তা করার অভিযোগ। ছবি: সংগৃহীত

লিবিয়ার অস্থিতিশীলতায় বিদ্রোহীদের সহায়তা করেছে রাশিয়া। এমন তথ্য উঠে এসেছে বিবিসির তদন্ত প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে জেনারেল হাফতারকে লিবিয়ান সামরিক বাহিনী ন্যাশনাল অ্যাকর্ড ফোর্সে’র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে ওয়াগনার গ্রুপ নামের একটি মার্সেনারি সংগঠন। যেটি পরিচালিত হয় মস্কো থেকে। ওয়াগনারের প্রায় ১ হাজার রুশ মার্সেনারি অংশ নেয় ওই লড়াইয়ে। বিপুল পরিমাণ অস্ত্রও পাঠানো হয় রাশিয়া থেকে।

২০১৯ সালে এপ্রিলে জেনারেল হাফতারের নেতৃত্বে বিদ্রোহী বাহিনী অগ্রসর হয় ত্রিপোলির দিকে। লিবিয়ান সামরিক বাহিনী, ন্যাশনাল অ্যাকর্ড ফোর্সে’র সাথে চলে তুমুল লড়াই। বিদ্রোহীদের হামলায়, পিছু হটে জিএনএ সেনারা। ওই লড়াইয়ে বেশ কিছু এলাকা দখলে নেয় হাফতার বাহিনী।

তখন অভিযোগ ওঠে বিদেশি সাহায্য নিয়েই এই হামলা করেন জেনারেল হাফতার। এবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জেনারেল হাফতারকে সহায়তা করেছে রাশিয়া।

বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হাফতার বাহিনীর পক্ষে লড়াই করতে ভাড়াটে সৈনিক বা মার্সেনারি হিসেবে পাঠানো হয় লিবিয়ায়। এমনই এক মার্সেনারির ফেলে যাওয়া ট্যাব মিলেছে বিবিসির লিবিয়া প্রতিনিধির কাছে। সেখান থেকেই এই বিষয়ে সূত্র পেয়ে অনুসন্ধানে নামে বিবিসি।

বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াগনার গ্রুপ নামে একটি মার্সেনারি সংগঠনের প্রায় ১ হাজার সদস্য যোগ দেন ওই লড়াইয়ে। তাদের জন্য ট্যাংক, শত শত একে ৪৭, এবং গাইডেড মিসাইলের অস্ত্র সরবরাহ করা হয় রাশিয়া থেকে।

লিবিয়ার গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ড (জিএনএ) ফোর্সের আর্টিলারি কমান্ডার হাইথাম ওয়াইফাল্লি বলেন, শুরু থেকেই তারা খুবই আগ্রাসী ছিলো। আমরা বুঝতে পারছিলাম এরা লিবিয়ার নয়। এদের অস্ত্রও ছিল ভিন্ন রকমের। যেটা সাধারণ লিবিয়া কিংবা এই অঞ্চলে আগে ব্যবহৃত হয়নি। যেমন ফিল্ডগান এবং গাইডেড মিসাইল।

লিবিয়ার জিএনএ ফোর্সের জেনারেল ওসামা জুয়াইলি বলেন, আমরা খেয়াল করে দেখলাম কিছু সৈন্যের আকৃতি এবং লড়াই করার ধরন লিবিয়ানদের থেকে আলাদা। এরা ছিল খুবই আগ্রাসী এবং বর্বর। যখন রকেট কিংবা ভারি মেশিনগান দিয়ে ওরা আমাদের সাথে পেরে উঠলো না তখনই দূর পাল্লার কামান থেকে হামলা হলো। যেটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল। তারপর আমরা বুঝলাম ওই যোদ্ধারা সবাই রুশ।

যদিও কাগজে কলমে ওয়াগনার গ্রুপের কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে বিবিসি বলছে এই সংস্থার সাথে অন্তত ১০ হাজার মার্সেনারি কাজ করছে। তবে এদের সক্ষমতা যেকোনো পেশাদার সেনাবাহিনীর মতোই।

রাশিয়া ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিলের বিশ্লেষক আন্দ্রে চুপ্রিগ্রিন জানান, এ ধরনের মার্সেনারি বা ভাড়াটে সৈন্যদের সংগঠনের কাগজে কলমে কোনো অস্তিত্ব থাকে না। এ ক্ষেত্রে রুশ সরকারের অবস্থান হলো যদি এই মার্সেনারিরা সফল হয় তখন তাদের সাহায্য করা অব্যাহত থাকে। আর যদি এরা ব্যর্থ হয় তাহলে সম্পর্ক অস্বীকার করা হয়।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র দফতর বিবিসিকে বলেছে, তারা লিবিয়ায় সংকটের একটা রাজনৈতিক সমাধান এবং সেখানে যুদ্ধবিরতির জন্য সাধ্যমত চেষ্টা চালাচ্ছে।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, লিবিয়ায় ওয়াগনারের তৎপরতা সম্পর্কে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা আসলে ‘বানানো তথ্য’ দিয়ে তৈরি করা, এবং এর আসল উদ্দেশ্য লিবিয়ায় রাশিয়ার নীতিকে বানচাল করা।

উল্লেখ্য, ওয়াগনার গ্রুপ প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৪ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের সময়। এছাড়া সিরিয়া, মোজাম্বিক এবং সুদানেও এই সংস্থার বিভিন্ন তৎপরতার প্রমাণ মেলে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply