কী ঘটেছিল সেই রাতে; প্রত্যক্ষদর্শী রমার মুখে ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা

|

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি-৩২ এর বাসভবন।

ছেচল্লিশ বছর আগের সেই কাল রাতের কথা এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারেননি আব্দুর রহমান শেখ ওরফে রমা। কাজ করতেন বঙ্গবন্ধুর বাসার সহকারী হিসেবে। ভয়াল সেই রাতের হত্যাযজ্ঞ তিনি দেখেছেন নিজের চোখে।

সেদিনের সেই কালোরাতের কথা যমুনা নিউজকে জানিয়েছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুর রহমান শেখ বঙ্গবন্ধুর শেষ সময়ের কথাগুলো স্মরণ করে বলেন, শেখ মুজিব এসে বললেন, সেরনিয়াবাদের বাসায় আক্রমণ হয়েছে। তোমরা কে কোথায় দেখো কি হয়েছে। এরই মধ্যে আমি দেখলাম কারা যেন আমাদের বাসার দিকে গুলি করতে করতে আসছে।

তিনি বলতে থাকেন, বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলেকে আনলাম তিন তলা থেকে, মেজ ছেলেকে আনলাম দোতলা থেকে। সবাইকে ডেকে আনলাম। সবাই তখন বেগম মুজিবের রুমে অবস্থান করছিলাম। ইন দ্য মিনটাইম বঙ্গবন্ধু তখন পুলিশের হেড, আর্মির সম্ভবত শফিউল্লাহ সাহেবের সাথে কথা বলছিলেন। তো উনারা উনাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসলো না বা সাহায্য করতে পারবে না বললো। বঙ্গবন্ধু সাথে সাথে উপরে চলে গেলেন। তখনই আর্মিরা আসলো। উনি দরজা খুলে বেরিয়ে বললেন, এই তোমরা কি চাও। ওরা বললো, চলেন আপনাকে নিতে আসছি। ৮-১০ জন আর্মি ছিল। আমি তখন উনার পেছনেই। এই কথা বলে উনাকে দুই তিন সিঁড়ি নামাতেই সামনে থেকে কে যেন উনাকে গুলি করে।

বঙ্গবন্ধুকে গুলি করেই শুধু থামেনি ঘাতক দল। এরপর শুরু হয় পুরো শেখ পরিবার নিশ্চিহ্ন করার যজ্ঞ। আব্দুর রহমান শেখ বলেন, এরপরই আরেক গ্রুপ আসে। তারা এসে বলতে থাকে এই দরজা খোলো, শেখ জামাল কই, এ কই ও কই। বেগম মুজিব আর রাসেল ভাইকে নিয়ে আমি নিচে নামছিলাম। তখনই তারা দেখলেন বঙ্গবন্ধুর লাশ পড়ে আছে। বেগম মুজিব বললেন আমি যাবো না, আমাকে এখানেই মেরে ফেলুক। এর মধ্যেই টানা গুলি চলছিল, আর মহিলারা আর্ত-চিৎকার করছিল।

আর্মিরা আমাদের নিচে এনে আমগাছতলায় বসালো। শেখ রাসেল খুব কান্নাকাটি করছিল, বারবার বলছিল আমি মার কাছে যাবো। এটা শুনে দূর থেকে এক আর্মি বললো এই ওকে নিয়ে আসো ও শুধু আম্মুর কাছে যেতে চায় তাহলে যাক। এরপর আমার কাছ থেকে রাসেল ভাইকে নিয়ে গেল। এর পাঁচ মিনিটের মাথায় আবার গুলি আর আর্ত-চিৎকার, আর কিছু শোনা গেল না।

এর মাঝেই আরেক লোক আসলো। বললো, আর কে কে আছে। তখন একজন বলল যে, নাহ আর কেউ নেই, সবাই ফিনিশ।

ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী ছিলেন তিনি। ১৯৬৯ সাল থেকেই বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে থাকতেন আব্দুর রহমান শেখ রমা।

/এস এন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply