তালেবানের মন্ত্রিসভায় নেই দক্ষ অর্থমন্ত্রী, ভেঙে পড়া অর্থনীতির চাকা ঘুরবে কোন দিকে?

|

ছবি: সংগৃহীত

মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে প্রধানমন্ত্রী করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। সেখানে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মোল্লা হেদায়েতুল্লাহ বাদরিকে, অর্থনীতিবিষয়ক (ইকোনমি) মন্ত্রী করা হয়েছে কারি দীন মোহাম্মদ হানিফকে এবং দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন হাজি মোহাম্মদ ইদরিস। তাদের কারোরই অর্থনীতি নিয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।

এর আগে, দেশটির সাবেক গভর্নর আজমল আহমেদি দেশ ছাড়ার পর বলেছিলেন, আফগানিস্তানে বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে অর্থনীতির হাল ধরতে প্রয়োজন দক্ষ হাত। এর সত্যতা ইতোমধ্যেই ফুটে উঠেছে আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে। তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশটির মৃুদ্রার মান কমতে শুরু করেছে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে মুদ্রাস্ফীতি।

এছাড়া আফগানিস্তানের রিজার্ভে থাকা ৯০০ কোটি ডলারও ফ্রিজ করা হয়েছে। আফগানিস্তান এর আগে ছিল বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর দেশ। তবে তালেবান ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে অনেক দেশই অনুদান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির অর্থনীতির চাকা কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে তা নিয়ে শঙ্কা আছেই।

এমন অবস্থায় জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত মোল্লা হেদায়েতুল্লাহ বাদরি পেয়েছেন তালেবান সরকারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। তিনি উপ-অর্থমন্ত্রী হিসেবে ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে তালেবানদের অর্থায়ন পরিচালনা করলেও তার বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকারে অভিযোগ আছে। তাই তার আমলে আফগানিস্তানসহ বিশ্বে মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে, দেশটিতে অর্থনীতিবিষয়ক (ইকোনমি) মন্ত্রী করা হয়েছে কারি দীন মোহাম্মদ হানিফকে, যার অর্থনীতি বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই নেই। এর আগে, তিনি শিক্ষাবিষয়ক দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১ সালে তালেবান সরকারের পতনের আগে আফগানিস্তানের ইসলামি আমিরাতের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এবং উচ্চশিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি কুরআনে হাফেজ হন এবং পরে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষা নিয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে, দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হাজি মোহাম্মদ ইদরিসেরও পড়াশোনার বিষয় অর্থনীতি নয়। তাই কীভাবে আফগানিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতির হাল ধরবেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা তা নিয়ে চলছে নানা তর্ক-বিতর্ক।

এর আগে, তালেবান সরকার গঠন করলে দেশটির অর্থনৈতিক কাঠমো কেমন হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছিল। সে সময় অনেকেরই মত ছিল, চোরাচালান বা মাদক-আফিমের ব্যবসা করে হয়তো একটি দল বা গোষ্ঠীকে চালানো যায়, গোটা দেশ নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, তালেবান মনে করছে আফগানিস্তানে বড় বিনিয়োগের বিষয়ে মধ্যস্থতা করবে চীন ও রাশিয়া। তবে এ ভাবনা কেবলই উচ্চাশা।

অর্থনীতি বা অন্য সব ক্ষেত্রে আকাশ সমান চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে যতটা অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার প্রয়োজন ছিল তার নমুনা নেই তালেবানের সদ্য ঘোষিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে। এখন তালেবান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে শূন্য থেকে টেনে তুলতে পারে কিনা সে দিকেই চোখ বিশ্বের।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply