‘তীরে এসে তরী ডোবানো’র যাতনা ভোগ করেছিলেন। সারাদেশের মানুষের স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় মুশফিকের অশ্রুসজল সে মুখের ছবি এখনও ক্রীড়াপ্রেমীরা ভুলতে পারেনি নিশ্চয়। নিদাহাস ট্রফিতে শনিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যেন ‘পাপমোচন’ করলেন মুশফিক। দেখালেন কীভাবে ম্যাচ জিততে হয়।
শনিবার ম্যাচের শেষে যখন অবিশ্বাস্য এক জয়ের সুবাতাস পেতে শুরু করেছে টাইগাররা, ঘুরে ফিরেই আসছিল ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের সেই স্মৃতি। শেষ ওভারে ২ চার হাকিয়ে ম্যাচ তখন বাংলাদেশের হাতে। তিন বলে দরকার ২ রান। তখনই ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেন মুশফিক। পরের বলে মাহমুদুল্লাহও একই কায়দায় উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসলে ম্যাচ ভারতের দিকে হেলে পড়ে। শেষ বলে ২ রান নিতে ব্যর্থ হন শুভাগত হোম। উপরন্তু অপর প্রান্তে থাকা মোস্তাফিজুর রহমান রান আউট হয়ে গেলে ১ রানে কষ্টে পুড়ে বাংলাদেশ।
সেদিন ম্যাচ জয়ের আগেই চার মেরে মুশফিক বিজয় উল্লাস করেছিলেন। যা নিয়ে পরে তুমুল সমালোচনার শিকার হতে হয় তাকে। কাল প্রেমাদাসায় যেন ২০১৬ সালে বেঙ্গালুরুতে করা সেই ভুলেরই ক্ষতিপূরণ করলেন মুশফিক। তার টিমমেট তামিম ইকবালের অন্তত সেই মত। বললেন, মুশফিক সেদিন যে ভুল করেছিল আজ তার পুনরাবৃত্তি হয়নি। আমি সবসময় বিশ্বাস করি ভালো, খারাপ দু’ধরনের ম্যাচ থেকেই শেখার আছে। সেদিন মুশফিককে যে পরিমাণ সমালোচনা সইতে হয়েছিল আজ নিশ্চয় তেমনই স্তুতিবাক্য শুনতে হবে। সে চমৎকার সামলেছে।
এটিকে মুশির সেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংস বলে মনে করেন তামিম। বললেন, তার চিন্তাভাবনা করার খুব বেশি সুযোগ ছিল না। প্রথম বল থেকেই তাকে চালিয়ে খেলতে হচ্ছিল।
৪ ছয় ও ৫ চারে সাজানো মুশফিকের ৩৫ বলে ৭২ রানের ইনিংসে ভর করে বাংলাদেশ তুলে নিয়েছে দুর্দান্ত এক জয়। একে ‘উল্লাসজনক জয়’ বলে মন্তব্য করেছে ক্রিকইনফো। এছাড়াও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ওঠে এসেছে মুশফিক-বন্দনা।
নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়কে ‘ঐতিহাসিক’ উল্লেখ করে এনডিটিভির অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে, প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে মুশফিকুর রহিমের ম্যাচ জেতানো অর্ধশত করা ইনিংসেই বাংলাদেশ নিজেদের টি-২০ আন্তর্জাতিক ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় পেয়েছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, মুশফিকুর রহিমের দুর্দান্ত এক ইনিংসে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঐতিহাসিক এক জয় লাভ করেছে। তামিম ও লিটন দাসের ওপেনিং জুটিরও প্রশংসা করেছে তারা।
কথায় বলে, ইতিহাস বিজয়ীদের কথা বলে। এর বিপরীত চিত্রটিই যেন এতদিন দেখে আসছিলেন মুশফিক। অন্তত, প্রেমাদাসায় যে দাঁতে দাঁতে চেপে বেঙ্গালুরুর পাপমোচন করছিলেন মুশফিক তা বুঝতে বোদ্ধা না হলেও চলছে। জয়তু মুশফিক!
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply