দীর্ঘ ৭০ বছর পর ফেসবুকের কল্যাণে সন্ধান পেয়েছেন আবদুল কুদ্দুস মুন্সি। ১০ বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া শিশু আবদুল কুদ্দুস মুন্সির বয়স এখন ৮০ বছর। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ শনিবার মা এবং একমাত্র বোনের সাথে সাক্ষাত করবেন আবদুল কুদ্দুস মুন্সি।
গত এপ্রিলে ১০ বছর বয়সে নিজের হারিয়ে যাওয়ার গল্প ফেসবুকে শেয়ার করার পর আপনজনদের খুঁজে পেয়েছেন আবদুল কুদ্দুস মুন্সি। আনুমানিক ১৯৪৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে রাজশাহীর বাগমারায় চাচার সাথে বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যান ১০ বছরের কুদ্দুস। পরে উপজেলার বাড়ুইপাড়া গ্রামে বসবাস করতে শুরু করেন তিনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কুদ্দুসের সন্ধান না পেয়ে এক পর্যায়ে তাকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিল পরিবার ও স্বজনরা। জানা গেছে, এখনও কুদ্দুসের বয়োবৃদ্ধা মা ও এক বোন বেঁচে আছেন।
এ দীর্ঘ ৭০টি বছরের প্রতিটি দিনই হারিয়ে যাওয়া ছেলের পথ চেয়ে কাটিয়েছেন আবদুল কুদ্দুসের মা। ফেসবুকে খোঁজ পাওয়ার পর ইতোমধ্যেই মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথাও বলেছেন তিনি, ৭০ বছর পর মায়ের সাথে কথা বলার সময় সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন মুহূর্ত।
স্থানীয় ও স্বজন সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীর বাগমারা এলাকায় শিশু অবস্থায় হারিয়ে যান কুদ্দুস। এরপর থেকে উপজেলার বাড়ুইপাড়া গ্রামে সংসার শুরু করেন তিনি। হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত নিজের পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন কুদ্দুস।
অবশেষে গত এপ্রিলে আইয়ূব আলী নামে পরিচিত একজনের ফেসবুক আইডিতে হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলেন কুদ্দুস। সেখানে তিনি শুধু বাবা-মা ও নিজ গ্রাম বাড্ডার নাম বলতে পারেন। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বাড্ডা গ্রামের বাসিন্দারা সাড়া দিতে থাকেন। এভাবেই এক পর্যায়ে কুদ্দুসকে খুঁজে পান তার পরিবারের সদস্যরা। আইয়ুব আলীর ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেয়া পোস্টে নিজের শেষ ইচ্ছা হিসেবে নিজের পরিবারের সাথে একবার হলেও দেখা করার কথা লেখেন। এক পর্যায়ের তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক ভাতিজা সে পোস্ট দেখে নিজের হারিয়ে যাওয়া চাচার কথা জানান পরিবারের কাছে। এরপর ফেসবুকে তাদের যোগাযোগ ও কথা হয়।
দীর্ঘ সাত দশক পর পরিবারকে খুঁজে পেয়ে কুদ্দুস বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। দীর্ঘদিন পর হলেও আমার ইচ্ছে পূর্ণ হয়েছে। আমার পরিবারের সাথে কথা হয়েছে, আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির মুহূর্ত এটি। শনিবার জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশে রওনা হবো, মায়ের সাথে দেখা হবে এটার চেয়ে ভালোলাগার কিছু হতে পারে না।
বাড়ুইপাড়া গ্রামে আবদুল কুদ্দুসের প্রতিবেশী গোলাম মোস্তফা বলেন, সেই ছোটবেলা থেকেই তিনি নিজের পরিবারের সাথে দেখা করার কথা সবাইকে বলতেন। কিন্তু এতদিন কেউ কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। অবশেষে ফেসবুকে লেখার পর তার পরিবারের খোঁজ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আমরা অনেক খুশি হয়েছি। দীর্ঘদিন পর একটা মানুষ তার একান্ত আপনজনদের খোঁজ পেয়েছেন।
/এসএইচ
Leave a reply