কুমিল্লা ব্যুরো:
কুমিল্লার নানুয়াদিঘীর পাড়ে পূজামণ্ডপে হনুমানের পায়ের উপর কোরআন রাখার ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজে সন্দেহভাজন ব্যক্তিটি ইকবাল হোসেন তা নিশ্চিত করেছে তার ভাই রায়হান। কুমিল্লা নগরীর সুজানগর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন ইকবালের পরিবার।
গত ১৩অক্টোবর সপ্তমী পূজার রাতে নগরীর নানুয়াদীঘির পাড়ে অস্থায়ী পূজামণ্ডপে কোরআন অবমাননার কথিত ঘটনায় দেশজুড়ে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা শুরু হয়। এ ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনার সাথে এক ব্যক্তির সরাসরি সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ। শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি সুজানগর এলাকার নূর আহমেদ আলমের বড় ছেলে ইকবাল হোসেন।
ইকবালের ছোটভাই রায়হান জানান, সিসিটিভির ফুটেজের এই মানুষ আমার ভাই। সে পাগল। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে খেলার মাঠে তাকে নিয়ে ছেলেপুলেরা দুষ্টামি করায় সে সবাইকে জুতা দিয়ে মেরেছিল। তবে নেশা করে কিনা সেটা আমি জানি না। সে যে মানুষ মাকে পাথর নিয়ে মারতে চায় সে বুঝে শুনে এমন কাজ করার কথা না। ওকে চা-পানি, নাস্তা করালে যা বলবে তাই করবে।
ইকবালের মা বিবি আমেনা নিজের ছেলেকে নিয়ে বিব্রত বলে জানান। তিনি বলেন, ইকবাল মানসিকভাবে অসুস্থ। তার মা দাবি করেন, বখাটেপনার কারণে গণপিটুনির শিকার হন ইকবাল। এরপর থেকে তার আচরণে সবাই অতিষ্ঠ। ইকবালকে পেলে আপনারা বিচার করবেন। এই সন্তানের জন্য আমার পরিবারটা শেষ হয়ে গেছে।
আরও দেখুন: কুমিল্লার মণ্ডপে কোরআন রাখা যুবককে শনাক্ত করেছে পুলিশ (ভিডিও)
সুজানগর এলাকার রবীন্দ্রচন্দ্র সূত্রধরের বাড়িতে ৩য় তলায় চার মাস যাবৎ ভাড়া থাকেন নূর আহমেদ আলমের পরিবার। বুধবার সন্ধ্যায় সেই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাসায় তালা দেয়া। বাড়ির মালিক জানান, তারা নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে গেছে বলে জানি। কিন্তু কেন গিয়েছে তা জানি না। ইকবালকে চিনি না, সে কখনও এই বাসায় আসতো না। তার বাবা ভূট্টো নামে পরিচিত। তিনি ফল ব্যবসা করেন। চার মাস ভাড়া থাকলেও ভাড়া দিয়েছেন দুই মাসের। স্থানীয় কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানিয়েছি।
ঘটনার পর থেকে ইকবালের বাবা পুলিশকে সহায়তা করছেন, তাই তিনি তাদের সাথে আছেন বলে জানান ইকবালের মা বিবি আমেনা ও ভাই রায়হান। শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীর দিন গত বুধবার ভোরে কুমিল্লা শহরের নানুয়াদীঘির উত্তর পাড়ে দর্পণ সংঘের উদ্যোগে আয়োজিত অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরীফ পাওয়া যায়। এরপর কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগ তুলে ওই মণ্ডপে হামলা চালায় একদল লোক।
এ ঘটনার জের ধরে ওই দিন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা করতে যাওয়া একদল ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। যেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতিতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধান করে ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তাদের সবাইকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমেই নেপথ্যে থাকা ‘মাস্টারমাইন্ড’দের শনাক্ত করা যাবে এমনটাই বিশ্বাস পুলিশের।
Leave a reply