চরম অনিশ্চয়তা। বুক দুরুদুরু সবার। নাহ, বাংলাদেশ বোধয় জিতবে না। ২ বলে দরকার ৬ রান। এটা কি আর আশা করা যায় ৯ম উইকেট জুটিতে! কিন্তু আবার মন মানতে চায় না। জিততেও তো পারে! ক্রিজে যে এখন এক ভরসা আছেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। শেষ মুহূর্তের ম্যাচ বাগিয়ে আনার রেকর্ড তো তার একেবারে কম না। হয়েও যেতে পারে।
এসব নানা চিন্তা ভিড় করছে মাথায়। এমন সময় বোলার এগিয়ে গেলেন ইনিংসের সবশেষ বলের আগের বলটি করতে। বল মাটি ছুঁলো। তারপর গড়িয়ে উঠতেই যেন রওয়ানা দিলে আকাশের দিকে! এবং কয়েক মুহূর্ত পরেই আছড়ে পড়লো গ্যালারিতে। ছক্কা! এক ছক্কাতেই বাংলাদেশের জয়; ২ উইকেটের ব্যবধানে।
গ্যালারি লাফিয়ে উঠলো। লাফিয়ে উঠলো হাজার কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশও। এবং এর মাধ্যমে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করলো টাইগাররা। সেখানে আগে থেকে অপেক্ষা করছে ভারত।
শুক্রবারের ম্যাচ শুরু হয় অবশ্য বাংলাদেশের জন্য ভাল কিছুর বার্তা দিয়েই। মাত্র দলীয় ৪১ রানে টপ অর্ডারের ৫ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বসে স্বাগতিকরা। চনমনে টাইগাররা ভালভাবেই চেপে ধরেছিলো লঙ্কানদের। কিন্তু এক পর্যায়ে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে সক্ষম দুই পেরেরার দৃঢ়তায়। শেষমেশ ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ১৫৯ তুলে তারা।
ব্যাট শুরুর পর ঠিকই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। ১২ ওভার শেষেও প্রয়োজনীয় রান রেট থেকে পিছিয়ে পড়েনি তামিমরা। হাতে তখনও ৮ উইকেট। এ ম্যাচে ফেবারিট তো বাংলাদেশই! কিন্তু কীভাবে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়তে হয় সেটাই দেখিয়ে দিলেন তামিম-মুশফিকেরা। মাত্র ১৫ বলের মধ্যে ৩ উইকেট হাওয়া! ৩ উইকেটে ৯৭ রান থেকে হঠাৎ করেই ৫ উইকেটে ১০৯ বাংলাদেশ।
মাত্র তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এক হাজার ছুঁয়েছেন মুশফিক। অপর প্রান্তে এই মাইলফলকে সবার আগে পৌঁছা তামিম। ১২ ওভার শেষে দলের স্কোর ২ উইকেটে ৯৫। ইনিংসের ওই অবস্থায় শ্রীলঙ্কার স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ৬৮ রান। ২৭ রানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ তো জয়ের আশা করতেই পারে।
তখন কভার দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে মুশফিক ফেরার পরও আশা হারায়নি বাংলাদেশ, তামিম যে ছিলেন। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান ইতিহাস সৃষ্টি করা সেই ইনিংসের পর আর কখনো ফিফটিও করতে পারেননি। আজ সে দুঃখটাও মিটল। ৪১ বলে ফিফটি করা তামিম কিনা আউট পরের বলেই!
কোনো চার-ছক্কা না মেরে ১০ রান করা সৌম্য আউট ৪ বল পরেই। তবে কি পথ হারাল বাংলাদেশ? ৩১ বলে ৫১ রানের সমীকরণ মাথায় নিয়ে মাঠে নামলেন সাকিব আল হাসান। বিদায় নিলেন দলকে ১২ বলে ২৩ রানের সমীকরণে।
এর মাঝে ৯ বলে ৭ রানই করতে পেরেছেন সাকিব। দলকে জেতানোর সব দায় দায়িত্ব সিরিজের আগের তিন ম্যাচের অধিনায়কত্ব করা মাহমুদউল্লাহর কাঁধেই পড়ল। মাহমুদউল্লাহও চেষ্টা করলেন তার সর্বোচ্চ। শেষ ওভারে ১২ রানের সমীকরণ, প্রতি বলে দুই রান। সমস্যা একটাই, স্ট্রাইকে যে নেই মাহমুদউল্লাহ। প্রথম দুই বল নষ্ট হলো, কোনো রান এল না। পরের দুই বলে নিলেন এক চার এবং এক ডাবল। শেষ দুই বলে প্রয়োজন ছয় রান। কিন্তু মাহমুদুল্লাহ শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে নারাজ! তাই ছয়টি তুলে নিলেন ওভারের পঞ্চম বলেই। এক বল বাকি থাকতেই ফাইনালের ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে গেলো বাঘেরা!
/কিউএস
Leave a reply