মালয়েশিয়ার মর্গে ১৭ দিন ধরে পড়ে আছে প্রবাসীর লাশ!

|

দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পর ১৭ দিন ধরে মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে এক বাংলাদেশির লাশ। দারিদ্র্যের কারণে লাশ আনানোর খরচ বহন সম্ভব নয়- কেবল এই কারণেই মালয়েশিয়ার মাটিতে লাশ দাফনের সম্মতি দিয়েছে পরিবার।

জন্ডিস ও লিভারের রোগে গত ১৬ অক্টোবর মো. জহিরুল ইসলাম জবু নামের গাইবান্ধার এই প্রবাসী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর এলাকার কবির পাড়া গ্রামের মৃত হোসেন আলী মুন্সির পুত্র।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জহিরুল বিয়ে করেননি। মা-বাবাও মারা গেছেন আগেই। অনেক খোঁজাখুজির পর দেশে থাকা জহিরুল ইসলামের ভাতিজি রোমানা আক্তারের সন্ধান মেলে। তার সাথে যোগাযোগের পরেই মূলত সামনে আসে তাদের পারিবারিক অসহায়ত্বের কথা।

রোমানা বলেন, তার চাচা জহিরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন। তাদের সাথে কোনো যোগাযোগও করেননি। এই অবস্থায় তার লাশ দেশে আনতে গেলে প্রায় ১ লাখ টাকার প্রয়োজন, কিন্তু এত টাকা সংগ্রহ করার সামর্থ্য আমাদের পরিবারের নেই।

মালয়েশিয়া প্রবাসী মো. শাহাদাত হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, ২ সপ্তাহ ধরে জহিরুল ইসলামের মরদেহ দেশটির ইপুহ এলাকার লাজা হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে। তার কোনো সঠিক ঠিকানা বা পরিচয় উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ তার সাথে যে পাসপোর্টের ফটোকপি পাওয়া গেছে, সেখানে তার বাড়ি নরসিংদীর সদরে অবস্থিত বলে উল্লেখ থাকলেও সেই ঠিকানায় এই নামে কাউকে পাওয়া যায়নি।

পরে জানা যায় জহিরের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়। শাহাদাত হেসেন আরো বলেন, হাসপাতালে কর্মরত থাকার সুবাদে আমি জানতে পারি ইপুহ লাজা হাসপাতালের মর্গে একজন বাংলাদেশির লাশ পড়ে আছে যার স্বজনের কোনো খোঁজ নেই। তখন আমি অনেক খোঁজাখুজি করে জহিরের আসল ঠিকানা উদ্ধার করি। তার ঠিকানা উদ্ধার করে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগও করি, কিন্তু তাদের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় লাশ মালয়েশিয়ায় দাফন করার সম্মতি দেয় তারা। পরিবার লাশ না নিলে মালয়েশিয়ায় কোনো এনজিওর মাধ্যমে লাশ দাফন করা হবে।

শাহাদত বলেন, জহিরুল ২৭ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় আছেন। কিন্তু তার সাথে কোনো ভ্যালিড পাসপোর্ট বা ভিসার কোনো সঠিক ডকুমেন্টস পাওয়া যায়নি। সে কনস্ট্রাকশন সেক্টরে কাজ করতো।

এদিকে জহিরের ভাতিজি রোমানা আক্তার জানিয়েছেন যদি কোনো সহৃদয় ব্যক্তি মরদেহ দেশে পাঠানোর খরচ বহন করেন, তাহলে তারা বিমানবন্দর থেকে তার লাশ গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকারিভাবে এই মরদেহ পাঠানোর সুযোগ নেই। তবে তার পরিবার যদি আবেদন করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ইউএনও বা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে, তাহলে সরকার রাজি হওয়া সাপেক্ষে সরকারি খরচে লাশ দেশে পাঠানো যেতে পারে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply