বৃথা হুংকারে শেষরক্ষা হবে ডোমিঙ্গোর?

|

ছবি: সংগৃহীত

হেড কোচ হিসেবে স্টিভ রোডসের বিদায়ের পর ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে দুই বছরের চুক্তিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দায়িত্ব নেন দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। ২ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ডোমিঙ্গোর সাথে আরও দুই বছরের চুক্তি বাড়ায় বিসিবি। কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরমেন্সে এই কোচের পদে থাকা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।

ডোমিঙ্গোর বাংলাদেশ দলের সাথে যাত্রা শুরু হয়েছিল তিক্ত অভিজ্ঞতা দিয়ে। ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের মতো নবাগত দলের সাথে টেস্ট হারে টাইগাররা। ভারত ও পাকিস্তান গিয়েও মিলেছে হতাশা। তবে ঘরের মাঠে সাফল্য মিলেছে দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েও ব্যর্থ বাংলাদেশ। যদিও ওয়ানডে সিরিজে ঘরের মাঠে লঙ্কানদের বিপক্ষেই জয় পেয়েছে টাইগাররা। জিম্বাবুয়ে গিয়েও তিন ফরম্যাটেই সিরিজ জেতে বাংলাদেশ দল।

টি-টোয়েন্টিতে একসময়ের পরাক্রমশালী দল অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ হারালেও উইকেট নিয়ে আছে বড় সমালোচনা। আর খর্বশক্তির দল নিয়ে এসেছিল অজিরা। সেপ্টেম্বরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরের একই স্লো পিচে খেলে টি-২০ সিরিজ জিতে বাংলাদেশ।

তবে দলটি চূড়ান্ত হতাশ করে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। মূলপর্বে খেলার জন্য শুরুতে বাছাইপর্ব খেলতে হয় টাইগারদের। আর বাছাইপর্বের শুরুতেই হেরে বসে স্কটল্যান্ডের মত তুলনামূলক দুর্বল দলের বিপক্ষে। যদিও পরের দুই ম্যাচে দুর্বল ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে জিতে সুপার টুয়েলভে উঠতে সক্ষম হয়।

তবে সুপার টুয়েলভে আবারও হারের বৃত্তে ঘুরপাক খেতে শুরু করে টাইগারবাহিনী। একটি ম্যাচেও জয়লাভ করতে পারেনি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। হেরেছে শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। হারের চেয়েও যেখানে বেশি সমালোচনা হয়েছে দলের খেলোয়াড়দের খেলার ধরণ ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে। সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়েছেন কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোও।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার আগে সুপার টুয়েলভের শেষ দুই ম্যাচে জেতার প্রত্যাশাও করেছিলেন ডোমিঙ্গো। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লজ্জার রেকর্ড গড়ে হেরে সে যাত্রায় পিছিয়েই পড়লো দল।

ডোমিঙ্গোকে নিয়ে সমালোচনা করেছেন মাশরাফীও। বলেছেন, এখন টিম ম্যানেজমেন্ট দেখলে মনে হয় একটা রিহ্যাব সেন্টার, যেখানে সাউথ আফ্রিকার সব চাকরি না পাওয়া কোচেরা একসাথে আমাদের রিহ্যাব সেন্টারে চাকরি করছে। এদের বাদ দেয়া আরও বিপদ, কারণ চুক্তির পুরো টাকাটা নিয়ে চলে যাবে। তাহলে দাঁড়ালো কী, তারা যতদিন থাকবে আর মন যা চাইবে, তাই করবে।

মাশরাফীর মতে, দেশের ক্রিকেট ঘিরে উন্মাদনার বিপরীতে দল ভালো করার জন্য যেমন পরিবেশ তাদের দেয়া দরকার সেটা ক্রিকেটাররা পাচ্ছেন না। তিনি লিখেছেন, আমি আমার ক্যাপ্টেন্সির শেষ প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলাম, এই দলের কোচ যে-ই হোক না কেন, এখন এই দলের রেজাল্ট করার সময়, এক্সপেরিমেন্টের না। কোচের চাহিদা মেটানোর আগে আমাদের দেশের স্বার্থ আগে দেখতে হবে। কারণ, ক্রিকেট দেশের মানুষের কাছে এখন স্রেফ খেলা নাই, রীতিমতো আবেগে পরিণত হয়েছে।

মাশরাফীর এমন বিস্ফোরক মন্তব্য ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স; সব মিলিয়ে ডোমিঙ্গোর পদে থাকা নিয়ে আছে ধোঁয়াশা। দলের এমন পরিস্থিতিতে বিসিবি কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটিই এখন দেখার বিষয়। বিসিবি যদি চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই ডোমিঙ্গোকে হেড কোচের পদ থেকে ছাঁটাই করে তাহলে অগ্রিম ৬ মাসের বেতন দিতে হবে এই কোচকে। এটি আর্থিকভাবে বিসিবির জন্য লাভজনক না হলেও ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থে অর্থের কথা চিন্তা করে বসে থাকবে বিশ্বের অন্যতম ধনী ক্রিকেট বোর্ড!


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply