ভালো করার প্রত্যয় নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হয়েছে উল্টো, পুরোপুরি ব্যর্থ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। প্রশ্ন আসছে কেন এমন হলো। কীসের ঘাটতি, প্রস্তুতি, পরিকল্পনা নাকি সামর্থ্য? টাইগারদের গত এক বছরের পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করে জানবো টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দলের প্রত্যাশা আর বাস্তবতার ফারাক।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মঙ্গলবারের ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের হতশ্রী চেহারাটা সামনে চলে এসেছে আবারও। সৌম্য, মুশফিক, আফিফদের শূন্য করার ম্যাচে বাংলাদেশ অলআউট হয় মাত্র ৮৪ রানে।
তবে কেবল প্রোটিয়া ম্যাচ নয়, বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভেই বিবর্ণ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল। ৪ ম্যাচে দলীয় সংগ্রহ ছিল মোট ৫১৮ রান। ম্যাচ প্রতি গড় স্কোর ১২৯। অবশ্য গত এক বছরে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়, এই ফরম্যাটে কতটা অপরিপক্ব রিয়াদের দল।
গত ১২ মাসে টি-টোয়েন্টিতে ২২ ম্যাচে ৫০৮ রান করেছেন নাঈম শেখ। এই মাঝারি মানের পারফর্ম করেই টাইগারদের মাঝে টপ স্কোরার এই ওপেনার। কিন্তু তার ১০২.৪১ স্ট্রাইক রেট মোটেও টি-টোয়েন্টির মেজাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ২২ ম্যাচে ৪৪৯ রান করা এই মিডল অর্ডার ব্যাটারের ১০৮.১৭ স্ট্রাইক রেটও সন্তোষজনক নয়। ১৮ ম্যাচে ৩২৭ রান করে তৃতীয় সেরা স্কোরার ছিলেন সাকিব। সাকিবের গড় ও স্ট্রাইক রেট কোনোটাই তার নামের সাথে মানানসই নয়।
গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন আফিফ হোসেন। কিন্তু স্ট্রাইক রেট ১২৩.১৩ হলেও এই মিডল অর্ডার ব্যাটারের গড় মাত্র ১৮.৪৭। সৌম্য সরকারের অবস্থাও কিছুটা একই। ১১৩ স্ট্রাইক রেটে ১৫ ম্যাচে সৌম্য সরকারের রান মাত্র ২৪৬।
সবচেয়ে হতাশাজনক পারফম্যান্স ছিল লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিমের। মারকুটে লিটন গত ১২ মাসে রান করেছেন মাত্র ৯৫.৮৫ স্ট্রাইক রেটে। আর গড় ছিল মাত্র ১৩.৮৬। অন্যদিকে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ মুশফিকুর রহিমও ছিলেন চূড়ান্ত ব্যর্থ। মাত্র ৯১ স্ট্রাইক রেটে ১২ ম্যাচে ১৮২ রান করেছেন মুশি।
গত এক বছরে পাকিস্তানের সেরা তিন টি-টোয়েন্টি ব্যাটারের পারফরম্যান্স স্পষ্ট করে দেয় বাংলাদেশের ব্যাটাররা কতটা পিছিয়ে। মোহাম্মদ রিজওয়ান এই সময়ে করেছেন ১০৭৯ রান, গড় ৮৩ আর স্ট্রাইক রেট ১৩৭.৪৫। বাবর আজম ১৩৪.২৭ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৮৫৪ রান। আর বয়সকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে মোহাম্মদ হাফিজও রান তুলেছেন ১৩৭.২৯ স্ট্রাইক রেটে।
এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, টি-টোয়েন্টির সাথে কতটা বেমানান বাংলাদেশের ব্যাটিং। কেবল স্ট্রাইক রেট কম থাকাই নয়, সেই সাথে ব্যাট হাতে একদমই অধারাবাহিক মুশফিক, সাকিব, রিয়াদরা। দেশের মাটিতে স্লো ও নিচে বল নিচু হয়ে আসা উইকেটে খেলে ব্যাটারদের হার্ড হিটিং মানসিকতাকে এক প্রকার নষ্ট করে ফেলে স্পোর্টিং উইকেটে আর যাই হোক ভালো রেজাল্ট করাটা বেশ কষ্টসাধ্য। সুপার টুয়েলভের কয়েকটা ক্লোজ ম্যাচের ফলাফল অনুকূলে আসলেই বরং ধন্যবাদ পেতে পারতো টাইগাররা।
Leave a reply