আজিমপুরে দেয়াল ধসে বাবার সামনে সন্তানের মৃত্যু

|

দেয়াল ধসে বাবার সামনে সন্তানের মৃত্যু।

রাজধানীর আজিমপুর কলোনীর দেয়াল ধসে জিসান নামের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বাবা নাজির হোসেনের সাথে স্কুলে যাওয়ার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। কলোনীর পুরাতন দেয়াল ঘেঁষে ড্রেন নির্মাণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এতেই দেয়ালটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভেঙে পড়েছে বলে দাবি গণপূর্ত বিভাগের। তাদের অভিযোগ, ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় দেয়াল ঘেঁষে ড্রেন নির্মাণ না করতে চিঠি দেয়া হলেও আমলে নেয়নি ডিএসসিসি।

আজ মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) সকাল ৮টায় বাবার হাত ধরে স্কুলের দিকে যাচ্ছিল ছোট্ট জিসান। আজিমপুরের ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুলের সামনে আসার আগেই ২৭নং কলোনীর বাউন্ডারি দেয়াল ধসে পড়ে জিসানের উপর। বাবা নাজির হোসেন সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেও বিপর্যয় ঠেকাতে পারেনি। মুহূর্তেই চাপা পড়ে শিশু জিসানের দেহ। তাৎক্ষণিকভাবে ইট সরিয়ে অচেতন সন্তানকে বের করে নাজির হোসেন ছোটেন ঢাকা মেডিকেলে। কিন্তু চিকিৎসক জানান, সব শেষ, আর নেই জিসান।

জিসানের বাবা নাজির হোসেন বলেন, দেয়ালটার সামনেই আমরা ছিলাম আর তখনই এটা ভেঙে পড়ে। আমি ইট এবং সবকিছু সরিয়ে বাচ্চাটিকে বের করি। ভেবেছি, মেডিকেলে নিলে হয়তো আল্লাহর রহমতে বাঁচাতে পারবো বাচ্চাকে।

বিকালে হাসপাতাল থেকে জিসানের মরদেহ শহীদ নগর মাস্টার বাড়ি এলাকায় নেয়া হলে কান্নায় ভেঙে পড়ে সবাই। এমন মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না কেউ।

জিসানের মা মনি বেগম বলেন, আজকে যদি তারা (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন) তাদের দায়িত্ব পালন করতো তাহলে আমার ছেলে মারা যেত না। আমার ছেলের জায়গায় অন্য যে কারো সাথেও এই ঘটনাটি ঘটতে পারতো।

কিন্তু কেন ঘটলো এত বড় দুর্ঘটনা? পিলখানা গণপূর্ত উপ-বিভাগ বলছে, দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই বাউন্ডারি দেয়ালের এত কাছে, ঝুঁকিপূর্ণভাবে ড্রেন নির্মাণের কাজ না করতে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছিল তারা। মে মাসের শেষ দিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়ে দেয়ালের কাঠামো সুরক্ষার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশন পূর্ত উপ-বিভাগের কথা শোনেনি।

গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কায়সার কবীর বলেন, আমরা লিখিতভাবে তাদের অবহিত করি যে, এভাবে দেয়াল নির্মাণে জানমালের ঝুঁকি রয়েছে। তথাপি, সেখানে নিরাপত্তা বিধি অনুসরণ করা হয়নি। এবং ড্রেন করতে গেলে বাউন্ডারি ওয়াল থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে করতে হয়। সেটিও মানা হয়নি।

ছবিতে দেখা যায়, কীভাবে বাঁশের মাধ্যমে দেয়াল ঠেকিয়ে রেখে চলছিল খোড়াখুড়ি। চিঠি দিয়ে অনুরোধ করার পরও এত ঝুঁকিপূর্ণভাবে কেন দেয়াল ঘেঁষে ড্রেন করা হচ্ছিল, সেটি এক বিরাট প্রশ্ন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply