বার্সার ভরাডুবি, দায় কার?

|

মাঠ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন বার্সা খেলোয়াড়রা, বেরিয়ে যাচ্ছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকেও। ছবি: সংগৃহীত

স্প্যানিশ লিগ থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ— বার্সেলোনার ভরাডুবি গল্পটা এখন সব টুর্নামেন্টের জন্যই প্রযোজ্য। তবে গত রাতে চ্যাম্পিয়িন্স লিগে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে অসহায় আত্মসমর্পণও যেন এসেছে ভবিতব্যের মতোই। তাই প্রশ্ন আসছে সামনে, এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী ক্লাবটির এই দুর্দশার পেছনে দায় কার?

১৭ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে ইউরোপা লিগে অবনমন ঘটেছে বার্সেলোনার। যে ক্লাবের অবস্থান সব সময় লিগ টেবিলের শীর্ষ তিনে থাকতো, কী কারণে এমন দুরবস্থা তাদের? প্রতিপক্ষরা এক সময় যে ক্লাবকে এড়াতে চাইতো মাঠে, চেলসির মতো পরাশক্তি যে ক্লাবের জালে এক গোল দিয়ে ফেললে বিস্ময় প্রকাশ করে রে হাডসনের মতো স্বনামধন্য ধারাভাষ্যকার বলতেন, মুহূর্তের জন্য শক্তিমান বার্সেলোনাকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে নর্থ লন্ডনের ক্লাব; সেই ক্লাব কেন নখদন্তহীনের মতো অসহায় আত্মসমর্পণ করছে ইউরোপের জায়ান্টদের কাছে?

ছবি: সংগৃহীত

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েছে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা। নক আউট পর্বে যেতে বেনফিকাকেও টপকাতে পারেনি গত ১৫ বছরে ৪ বার ইউরোপ সেরার মুকুট পরা ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা। ক্যাতালান ক্লাবটিকে তাই খেলতে হবে ইউরোপা লিগ। আনসু ফাতি-পেদ্রিরা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেননি ক্যারিয়ারে এমন একটা দিন দেখতে হবে তাদের। এমনটা ভাবার মতো ক্ষেত্র কয়েকদিন আগেও ছিল বেশ দূরের ব্যাপার। ২০০৩-০৪ মৌসুমে শেষবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্ব থেকে নক আউটে যেতে ব্যর্থ হয়েছিল বার্সেলোনা। তারপর এমন ভরাডুবি ঘটলো চলতি মৌসুমে। দেখার বিষয় হচ্ছে, ২০০৩-০৪ মৌসুমের পরের মৌসুমেই ক্যাটালান স্কোয়াডে আসেন লিওনেল মেসি। সম্পূর্ণ মেসি যুগে এমন ঘটনাকে জাদুঘরে পাঠাতে পেরেছিল ব্লাউগ্রানারা। আর মেসি চলে যাওয়ার ঠিক পরের ইউরোপিয়ান আসরেই মুখ থুবড়ে পড়লো বার্সা।

Laporta explains why Messi can't stay at Barcelona
ছবি: সংগৃহীত

এমন ভরাডুবিতে দায় এড়াতে বেশ কষ্টই করতে হবে ক্লাব ম্যানেজমেন্টকে। ‘যেকোনো মূল্যে মেসিকে রেখে দেয়া হবে ক্লাবে’— এই মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্যাতালান ক্লাবটির দায়িত্বে এসেছিলেন হুয়ান লাপোর্তা। কিন্তু দায়িত্বে আসার কিছুদিন পর লাপোর্তা বলতে লাগলেন, ব্যক্তির চেয়ে ক্লাব বড়। তারপর মেসিকে ছেঁটে ফেললেন ক্লাব থেকে। সেই ঘটনার সাথে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বার্সার ইউরোপা লিগে অবনমনের সংযোগ কেউ খুঁজতে গেলে সূত্রের অভাব হওয়ার কথা নয়। হুয়ান লাপোর্তার আগে বার্সা সভাপতি ছিলেন হোসে মারিয়া বার্তোমেউ। দুর্দশার শুরুও সেখান থেকেই। সবশেষ ট্রান্সফার মার্কেটে ক্লাবের অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ভূমিকার পেছনে রয়েছে বার্তোমেউ ম্যানেজমেন্টের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত, ফ্লপ সাইনিং এবং ক্লাবকে ঋণের বোঝায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত রেখে বিদায় নেয়া।

সঠিক সময় সঠিক খেলোয়াড় ধরে রাখার ব্যর্থতা ও ভুল সময় ভুল খেলোয়াড় কেনার মাশুল এখন গুনছে বার্সেলোনা। কিন্তু এত খারাপের মধ্যেও আশার আলো দেখছেন বার্সা কোচ জাভি ফার্নান্দেজ। তিনি বলেছেন, নিজেদের আরও নিংড়ে দিতে হবে। আমরা বার্সেলোনা। গতিধারা পাল্টাতে এটাই হয়তো পরিবর্তনের সূচনা। এটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, এখানে সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। কিন্তু আমরা কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারিনি। এটাই বাস্তবতা। আজ থেকে নতুন যুগের শুরু হল। এখন হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার সময় না। জেগে উঠতে হবে আমাদের। বার্সাকে যোগ্য জায়গায় ফেরাতে হবে।

নতুন কোচ জাভি নতুন উদ্যমে শুরু করতে চান সব। আগামী জানুয়ারিতে তার পরিকল্পনা মোতাবেক খেলোয়াড়ও কিনবে ক্লাবটি। আবারও ঘুরে দাঁড়াতে ক্লাব লেজেন্ড জাভিতেই আস্থা রাখছে বার্সেলোনা।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply