কয়েকমাস আগেও তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক। কিন্তু ঘরের বাইরে নারীদের কাজ করার ওপর তালেবানের নিষেধাজ্ঞা জারির পর চাকরি হারিয়েছেন সাবেক শিক্ষক হাদিয়া আহমাদি। পরিবারে তিনি ছাড়া এই মুহুর্তে নেই আর কোনো উপার্জনক্ষম মানুষ। তাই বাধ্য হয়ে ফুটপাথে জুতা পালিশের কাজ শুরু করেছেন তিনি। খবর রয়টার্সের।
গত ১৫ আগস্ট তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করলে দেশটিতে শুরু হয় ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কট। এ সঙ্কটের জেরেই শিক্ষকতা ছেড়ে ফুটপাথে জুতা সেলাই করতে বাধ্য হয়েছেন হাদিয়া। তিনি বলেন, তালেবান ক্ষমতায় আসার পরই চাকরী হারাই আমি। আমার সন্তানদের ক্ষুধার্ত দেখার পর জুতা পলিশের কাজ শুরু করি। এছাড়া সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেয়ার আর কোনো উপায় পাচ্ছিলাম না।
তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে হাদিয়া আহমাদি শিক্ষকতা করতেন। তার স্বামী একটি রেস্টুরেন্টের বাবুর্চি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া তার এক মেয়েও সরকারি একটি সংস্থায় চাকরিরত ছিলেন। সব মিলিয়ে বেশ সচ্ছলভাবেই দিন কাটছিলো তাদের। কিন্তু মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসে পরিবারটি। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর পরিবারের উপার্জনকারী তিনজনের মধ্যে প্রথম চাকরি হারান হাদিয়া আহমাদি। এর কয়েক দিন পরই তাঁর স্বামী এবং সর্বশেষ তাঁর মেয়েও চাকরি হারান। এমনকি টিউশন ফি দিতে না পারায় কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা বাদ দিতে বাধ্য হন তাঁর এক ছেলে।
হাদিয়া আহমাদি বলেন, আমরা এখন ক্ষুধা নিয়ে দিন পার করছি। আমাদের পরিবারে এমন কেউ নেই, যে অর্থনৈতিকভাবে আমাদের সবাইকে চালাতে পারে। আহমাদি বলেন, অনেক বিধবা নারীই তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তালেবানের অবশ্যই নারীদের ঘরের বাইরে কাজের অধিকার দিতে হবে।
এর আগে, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করার অনুমোদন দেয়নি তালেবান সরকার। তবে এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে আহমাদির মতো অনেকেরই ঘরের বাইরে কাজ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
উল্লেখ্য, গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলে নেয় তালেবান সরকার। ক্ষমতায় আসার পরই দেশজুড়ে মেয়েদের স্কুলগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। নিষিদ্ধ করা হয় ঘরের বাইরে নারীদের কাজ করা। এরপর গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তালেবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয় তালেবান। তবে বিশ্বের কোনো দেশই এখন পর্যন্ত তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। আসন্ন মানবিক বিপর্যয় এড়াতে জাতিসংঘ এরই মধ্যে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা জোগাড়ের চেষ্টা করছে। তবে বিদেশি সহায়তা বন্ধ এবং দেশটির ব্যাংক ব্যবস্থা ধসে পড়ায় আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক সঙ্কট তীব্র হচ্ছে।
/এসএইচ
Leave a reply