‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ প্রতিবারের ন্যায় এবছরও এ শ্লোগানকে ধারণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনব্যাপী প্রজাপতি মেলা। ১১তম বারের মতো আয়োজিত এই মেলায় ৫০-৬০ প্রজাতির প্রজাপতি প্রদর্শিত হয়েছে।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. রাশেদা আক্তার।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে ড. রাশেদা আক্তার বলেন, প্রজাপতি প্রকৃতি ও পরিবেশে বিপর্যয়ের ইঙ্গিত প্রদান করে। পরিবেশ ও প্রকৃতি সতেজতা ফিরে পেলে আমরা প্রজাপতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি। প্রজাপতি গাছে বাস করে, ফুল থেকে মধু আহার করে এবং গাছেই বংশবিস্তার করে। প্রজাপতি পরাগায়ন করে জন্যই নতুন নতুন উদ্ভিদের জন্ম হয়, যে উদ্ভিদ থেকে একসময় বৃক্ষ হয়। আসুন আমরা গাছ রক্ষার পাশাপাশি প্রজাপতির জন্যে নিরাপদ বাসস্থান গড়ে তুলি।
প্রতিবারের ন্যায় এবছরও মেলা পরিচালনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ এবং আহ্বায়ক হিসেবে ছিলেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন। দেশে একমাত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে প্রজাপতি পার্ক। যে পার্কে প্রায় ৯০ প্রজাতির প্রজাপতি দেখতে পাওয়া যায়। এজন্য প্রতিবছর প্রজাপতি রক্ষায় সচেতনতামূলক প্রজাপতি মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। মেলার উদ্বোধনের মধ্যে দিয়েই শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। এরপর শুরু হয় প্রজাপতি সম্পর্কিত বিভিন্ন শো এবং প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা, জীবন্ত প্রজাপতি প্রদর্শনী, প্রজাপতির আকৃতির ঘুরি প্রদর্শনী, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও ডকুমেন্টারিসহ পুরষ্কার বিতরণী বাহারি আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবছরের প্রজাপতি মেলা।
অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন প্রজাপতি মেলা সম্পর্কে বলেন, প্রজাপতি হলো একটি ছোট্ট নান্দনিক প্রাণী। যা মানুষকে আনন্দ দেয়। অথচ দিন দিন এই নান্দনিক প্রাণীটি প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এজন্য কিছুটা মানুষের কর্মকাণ্ড দায়ী, আর কিছুটা দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন। গাছপালা বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রজাপতি রক্ষা করতে হবে। কারণ প্রজাপতির পরাগায়নেই উদ্ভিদের ও গাছের সৃষ্টি। তাই মানুষের মাঝে প্রজাপতির গুরুত্ব অনুধাবন ও সংরক্ষণ পদ্ধতি শেখাতেই আমাদের এই মেলার আয়োজন।
প্রজাপতি মেলায় ঘুরতে আসা রহিমা পারভিন নামে এক অভিভাবক বলেন, আমি আমার শিশু সন্তানকে মেলায় নিয়ে এসেছি। একজন সচেতন মা হিসেবে আমার এটা দায়িত্ব। এতে করে আমার সন্তান ছোট থেকেই প্রজাপতির গুরুত্ব বুঝতে পারবে বলে মনে করি। এছাড়া আনন্দও পাবে।
এবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান সমীকে বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি সিরাজগঞ্জের আলহাজ ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. হাসমত আলীকে বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড-২০২১ প্রদান করা হয়েছে। তারা দু’জনেই প্রজাপতি সংরক্ষণে সার্বিক অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এই সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, প্রজাপতি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজাপতি মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
Leave a reply