স্মরণকালের ভয়াবহতম টর্নেডোর তাণ্ডবে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের ছয় অঙ্গরাজ্য। এই টর্নেডো নজিরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে কেনটাকিতে। সেখানে ৭০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রাণহানি একশো ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশঙ্কা করছেন রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ডি বেশার। কেনটাকিতে জারি হয়েছে জরুরি অবস্থা। আরকানসাস, ইলিনয়, মিসৌরি, মিসিসিপি এবং টেনেসি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টর্নেডোর আঘাতে।
গত শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) রাতভর নজিরবিহীন তাণ্ডব চলে টর্নেডোর। এতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় মাইলের পর মাইল এলাকা। যতদূর চোখ যায় কেবল ধ্বংসযজ্ঞ। মেফিল্ডের বাসিন্দা ৬৬ বছর বয়সী জ্যানেট কিম্প বর্ণনা দিলেন সেই ভয়াবহতার। বললেন, পেছনের দরজাটা আমার মুখে আঘাত করে। ছেলে চিৎকার করে দৌঁড়ে এসে আমাকে সরিয়ে নেয়। এত জোরে বাতাস হচ্ছিল, দাঁড়াতে পারছিলাম না। প্রাণে বেঁচে গেছি। কিন্তু আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।
উত্তর-পূর্ব আরকানসাসে উৎপত্তি হওয়া টর্নেডোটির ব্যাস ছিল প্রায় ২ মাইল। তাণ্ডব চালিয়ে সেটি পাড়ি দেয় ২শ’ মাইলের বেশি এলাকা। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কেনটাকি অঙ্গরাজ্য। আরকানসাস, ইলিনয়, মিসৌরি, মিসিসিপি ও টেনেসিতেও চলে ধ্বংসযজ্ঞ। টর্নেডোর প্রভাবে রাতভর চলে ঝড় আর বজ্রপাত।
আরকানসাসের এক বাসিন্দা বলেন, ঝড় থামার পর ভোরের দিকে বের হয়ে দেখি চারদিকে সব মাটিতে মিশে গেছে। বিশাল ধ্বংসযজ্ঞের মাঝে কেবল আমাদের বাড়িটাই টিকে আছে।
বিভিন্ন স্থানে ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে অনেকে। চলছে উদ্ধার অভিযান। ঝড়ের প্রভাবে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে আছে লাখ লাখ বাড়িঘর। এরকম অবস্থার মধ্যে কেনটাকির গভর্নর অ্যান্ডি বুশার বলেন, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী টর্নেডো ছিল এটি। ভাষায় বর্ণনা সম্ভব নয়। জীবনে কখনও এত ধ্বংসযজ্ঞ দেখিনি।
শনিবার দুর্গত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী টর্নেডো বলে এটিকে আখ্যা দেন তিনি। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শীতকালে এমন টর্নেডোর নজির নেই যুক্তরাষ্ট্রে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. জেফ মাস্টারস বলেন, এমন আবহাওয়া মার্চ, এপ্রিল, মে’তে থাকার কথা। বছরের এই সময়ে টর্নেডো! অবিশ্বাস্য! টর্নেডোর আকারও ছিল বড় একটা বিষয়। ব্যাস প্রায় দুই মাইল। এত বড় ও শক্তিশালী ছিল যে, পালানোর পথ ছিল না।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘন ঘন হবে এ ধরনের দুর্যোগ, এমন সতর্কবার্তাই দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: লন্ডনে গাড়ি থামিয়ে চালককে পুলিশের গুলি
Leave a reply