মিগেল অ্যাঞ্জেল ফেলিক্স গ্যালার্দো; যার জন্ম ১৯৪৬ সালে, উত্তর-পশ্চিম মেক্সিকোর একটি খামারে। ১৭ বছর বয়সে মেক্সিকোর ফেডারেল জুডিসিয়াল পুলিশ এজেন্ট হিসেবে তিনি সরকারি কাজে যোগ দেন। ওই বিভাগের অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তাই ছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত। গ্যালার্দো দ্রুত তাদের সংস্পর্শে আসেন। সিনালোয়ার গভর্নরের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ছিলেন তিনি। পেড্রো অ্যাভিলেস পেরেজ নামের আরেক দেহরক্ষী গ্যালার্দোকে পরিচয় করিয়ে দেন অন্ধকার জগতের সঙ্গে। কুখ্যাত মাদক পাচারকারী পেরেজ তার হেরোইন ও গাঁজার ব্যবসার দায়িত্ব দেন গালার্দোকে।
এতটুকু পড়েই অনেকের মনে হতে পারে, গ্যালার্দো চরিত্রটি পরিচিত মনে হচ্ছে। যারা কিনা ওয়েব সিরিজের দুনিয়ায় বেশ সাড়া ফেলা ‘নারকোজ: মেক্সিকো’ দেখেছেন তাদের কাছে। ওয়েব সিরিজটির প্রধান চরিত্র এই মিগেল অ্যাঞ্জেল ফেলিক্স গ্যালার্দো-ই। মেক্সিকোর মাদক সাম্রাজ্যের মুকুটহীন সম্রাট ছিলেন গ্যালার্দো। তাকে বলা হত ‘এল পেদ্রো’। এই স্প্যানিশ শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘গড ফাদার’।
১৯৭৮ সালে পুলিশের গুলিতে পেরেজের মৃত্যু হলে তার মাদক সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেন গ্যালার্দো। তৈরি করেন মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক সাম্রাজ্য গুয়াডালাজারা কার্টেল। এরপরই গড ফাদার তকমা পান। সেই থেকে শুরু। দুই বছরের মধ্যেই ১৯৮০ সালে পেরেজের ব্যবসাকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে তোলেন গ্যালার্দো। ১৩৪৪ একর জমিতে গাঁজা চাষ করে প্রতি বছর ৮০০ কোটি ডলারের উৎপাদন শুরু হয়।
অঘটন ঘটে ঠিক পাঁচ বছরের মাথায়। গ্যালার্দোর মাদক ব্যবসার খোঁজ পাওয়া এক সরকারি গোয়েন্দাকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। কিকি কামারেনা নামে ওই গোয়েন্দার খুলি, চোয়াল, নাক— এমনকি গালের হাড়ও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। শ্বাসনালিও থেঁতলে গিয়েছিল। পাঁজরের প্রতিটা হাড় ছিল ভাঙা। আর মাথার ঠিক মাঝ বরাবর একটি গর্ত ছিল, যেটা গুলির কারণে নয় বলেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা।
দেওয়াল ফুটো করার যন্ত্র বা ড্রিল মেশিন দিয়ে মাথায় ওই গর্ত করা হয়েছে বলে অনুমান করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। পুরোপুরি মেরে ফেলার আগে অমানুষিক অত্যাচার করা হয়েছিল কিকির উপর। এই খুনের দায় এসে পড়ে গ্যালার্দোর উপর।
আমেরিকার মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিইএ’র কর্মীরা সম্ভবত পণ করেছিলেন গ্যালার্দোর শেষ দেখে ছাড়বেন। তারাই গ্যালার্দোর সাধের গুয়ার্ডাজালায় একের পর এক অভিযান চালান। গ্রেফতার করেন মাদক সম্রাটকে।
জেলে থেকেও পরে নিজের সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিলেন গ্যালার্দো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেননি। তার অনুপস্থিতিতে মাথা তুলতে শুরু করে ছোট ছোট মাদক ব্যবসায়ী। ছাড়খাড় হয়ে যায় গুয়াডালাজারা কার্টেল।
গ্যালার্দো অবশ্য বারবার এই খুনের কথা অস্বীকার করেছেন। জেল থেকে লেখা তার ডায়েরি প্রকাশ করত একটি পত্রিকা। সেখানে সরাসরি একাধিক আইন ভাঙার কথা স্বীকার করলেও খুনের কথা মানতে চাননি গ্যালার্দো।
যাইহোক, মাদক সাম্রাজ্যের বিপুল প্রতিপত্তির জন্যই তাকে ‘বস অফ দ্য বসেস’ও বলা হত। বলা হত, মাদকে ‘সোনা’ ফলাতে পারতেন গ্যালার্দো। মাদক সাম্রাজ্য বিস্তারের পাশাপাশি নিজের সম্পত্তিও বিপুল বাড়িয়ে ফেলেছিলেন তিনি। আর এই সম্পত্তির পরিমাণ বাড়তে বাড়তে পৌঁছেছিল ৫০ কোটি ডলারে! মজা করে তাকে বলা হয় ‘বিল গেটস অব কোকেন’।
তবে, কোকেনের বিল গেটস এর ঠিকানা এখন একটি ছ’ফুট বাই আট ফুটের ঘুপচি ঘর। আমেরিকার কারাগারে ৩৭ বছর বন্দি থাকতে হবে তাকে।
Leave a reply