আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে চিরবৈরী দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান। রোববার (১৯ ডিসেম্বর) ওআইসি সম্মেলনে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, দুর্ভোগে থাকা আফগানদের সহায়তা করা ধর্মীয় দায়িত্ব। এখনই সন্ত্রাসবাদ দমনে কার্যকরী উদ্যোগ না নিলে, গোটা অঞ্চলে ছড়াবে সহিংসতা। একইদিন মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সংলাপে আফগান সরকারের প্রতি ৪টি প্রস্তাব দেন ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জানান, রক্ষা করতে হবে নারী-শিশু-সংখ্যালঘুর অধিকার।
চরম খাদ্য সংকটে রয়েছে আফগানিস্তানের ৯৮ শতাংশ মানুষ। গেলো সপ্তাহে এ তথ্যটি জানায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP)। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে দুর্ভিক্ষে পড়বেন দেশটির দুই কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ। যার মূল কারণ হচ্ছে ভঙ্গুর অর্থনীতি, অস্বাভাবিক মুদ্রাস্ফীতি এবং আফগান মুদ্রার দরপতন।
এই সংকট থেকে আফগানিস্তানকে উদ্ধারে জরুরি বৈঠক ডাকে ইসলামিক দেশগুলোর জোট ওআইসি (OIC)। ক্ষুধা-দারিদ্র থেকে আফগানদের রক্ষায় তহবিল গঠনের ঘোষণা আসে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে। এ সময়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেন, দুর্ভোগে থাকা আফগানদের সহযোগিতা করা ধর্মীয় দায়িত্ব। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে বলবো, তালেবানের মতাদর্শের সাথে কোনোভাবেই ৪ কোটি আফগানের চিন্তাধারাকে আপনারা মেলাতে পারেন না। যতোই ২০-৪০ বছরের দ্বন্দ্ব থাকুক না কেন, এটা মানবিকতার প্রশ্ন। দয়া করে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেবেন না। আর, এখনই সন্ত্রাসবাদ দমনে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। নতুবা, বিশৃঙ্খলা ছড়াবে গোটা অঞ্চলে।
একইদিন, মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে আফগানিস্তান ইস্যুতে সংলাপ ছিল নয়াদিল্লির। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আঞ্চলিক শান্তি অক্ষুন্ন রাখতে নজর দিতে হবে আফগানদের কল্যাণে। আনতে হবে গণতান্ত্রিক পরিবর্তন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর বলেন, সবার অংশগ্রহণে প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার চাই আফগানিস্তানে। দেশটির সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে নিন কার্যকরী পদক্ষেপ। নিশ্চিত করুন নিরঙ্কুশ মানবিক সহায়তা। তাছাড়া, নারী-শিশু-সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার রক্ষার প্রতিও দিতে হবে গুরুত্ব। কারণ, আফগানিস্তানের সাথে মধ্য এশিয়ার পাশাপাশি ভারতের ঐতিহাসিক এবং গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
দীর্ঘ দু’দশকের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধের পর ৩০ আগস্ট আফগানিস্তান ছাড়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সেনাবহর। এর আগেই, দেশটিতে পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তালেবান। ফলে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ জব্দের পাশাপাশি সহযোগিতা বন্ধ করে দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ দাতাগোষ্ঠীরা। তারপর থেকেই দেশটিতে চলছে টানাপোড়েন।
Leave a reply