মনিরুল ইসলাম:
রোগীর পিত্তথলির অপারেশনে খাদ্যনালী কেটে ফেলেছেন এক চিকিৎসক। অভিযোগ রয়েছে, এতো বড় ঘটনার পরও রোগীর সমস্যায় পাত্তা দেননি ডাক্তার। অপারেশনের আটদিন পর মারা যান মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ছাত্র তরিকুল ইসলাম তোহা ওরফে প্রিন্স। এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন ক্যান্সার হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবীর।
সন্তান হারা মাকে সান্ত্বনা দেয়ার ক্ষমতা হয়তো পৃথিবীর কারও নেই। নেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সাধ্য। ১৭ বয়সী তরতাজা ছেলেকে চোখের সামনে মারা যেতে দেখেছেন রাজধানীর মুগদার বাসিন্দা পারভীন আক্তার।
মাসখানেক আগে ১৯ ডিসেম্বর খিলগাঁওয়ের খিদমাহ হাসপাতালে পিত্তথলির পাথর অপসারণে অপারেশন হয় মতিঝিল আইডিয়ালের নবম শ্রেণির ছাত্র তরিকুল ইসলাম প্রিন্সের। রাত ১২টার দিকে অপারেশন করেন সরকারি ক্যানসার হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর কবীর। নিহত প্রিন্সের মা পারভীন আক্তার জানালেন, অপারেশনের পরই দেখা দেয় জটিল কিছু লক্ষণ।
বাসায় ফিরে প্রিন্সের অবস্থার আরও অবনতি হয়। ২১ তারিখ আবার নেয়া হয় খিদমাহ হাসপাতালে। স্বজনদের অভিযোগ, প্রিন্স অনেকটা ‘শকে’ চলে গেলেও পাত্তা দেননি ডাক্তার জাহাঙ্গীর এমনকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মধ্যেরাতে হাসপাতাল থেকে বলা হয়, প্রিন্সের জন্য আইসিইউ দরকার, স্থানান্তর করতে হবে অন্য জায়গায়। দিশেহারা হয়ে তাকে শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে নেন স্বজনরা। সেখানে জানা যায়, প্রিন্সের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বেশ কিছু পরীক্ষার পর দেখা যায়, খাদ্যনালীতে বড় ধরনের ছিদ্র।
স্পেশাইলাইজড হাসপাতালে দুই দফা অপারেশনের পর ২৮ তারিখ মারা যান প্রিন্স। স্বজনদের অভিযোগ, পিত্তথলির পাথর ফেলতে গিয়ে খাদ্যনালী ফুটো করে ফেলেন ডাক্তার।
এদিকে স্পেশাইলাইজড হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শাহরিয়ার ফয়সাল আরেকজন সিনিয়র চিকিৎসকের কাজ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কথা বলতে রাজি হননি। তবে তিনি এটা নিশ্চিত করেন যে, আগের অপারেশনে বড় ধরনের ভুল হয়েছে। এমনকি সমস্যা সমাধানে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। এমনকি মৃত্যুসনদেও কারণ হিসেবে উল্লেখ আছে খাদ্যনালীতে ছিদ্রের কথা।
অভিযোগের বিষয়ে খিদমাহ হাসপাতালের ম্যানেজার ডা. আনসার মৌখিকভাবে জানান, ডাক্তার জাহাঙ্গীরের পরামর্শ মতোই ব্যবস্থা নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তবে অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করেন ডা. জাহাঙ্গীর কবীর। তিনি পুরো ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও কোনো অবহেলা করেননি বলে দাবি করেন।
এদিকে, প্রিন্সের মৃত্যুতে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছে ভুক্তভোগী পরিবার।
/এডব্লিউ
Leave a reply