পরকীয়ার অভিযোগ, হত্যা চেষ্টার শিকারসহ লতার জীবনের চমকপ্রদ কিছু তথ্য

|

ছবি: সংগৃহীত।

সঙ্গীত জগতের এক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে রোববার (৬ জানুয়ারি)। ভারতীয় গায়িকা লতা মঙ্গেশকর মারা গেছেন। একবার এক অনুষ্ঠানে লতা তার জীবনের দু’টি অপূর্ণ ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে ইচ্ছেগুলো অপূর্ণই রয়ে গেলো। চলুন এবার লতা মঙ্গেশকর সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য জেনে আসি।

১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মারাঠি মঙ্গেশকর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন লতা মঙ্গেশকর। তবে লতা তার আসল নাম নয়। গায়িকার প্রকৃত নাম ছিল হেমা। তবে পরে তার বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকরের নাটক ‘ভাও বন্ধন’ এর বিখ্যাত চরিত্র লতিকা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি তার নাম পরিবর্তন করে লতা রাখেন।

জানা যায়, লতা তার জীবনে মাত্র একদিন স্কুলে গিয়েছিলেন। একদিন স্কুলে ছোট বোন আশা ভোসলেকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন লতা। তারপর ক্লাসের মধ্যেই নিজের সহপাঠীদের গান শেখানো শুরু করেন তিনি। স্কুলের শিক্ষকরা এ কারণে তাকে শাসন করলে অভিমান করে স্কুলে যাওয়াই ছেড়ে দেন লতা। প্রথাগত বিদ্যা কখনও শেখেননি তিনি। একজন গৃহকর্মী তাকে মারাঠি বর্ণপরিচয় শিখিয়েছেন এবং স্থানীয় একজন পুরোহিত তাকে সংস্কৃত শেখান। আত্মীয়স্বজন এবং শিক্ষকরা তাদের বাড়িতে এসে তাকে অন্যান্য বিষয় শেখাতেন।

আরও পড়ুন: এক নজরে কোকিলকণ্ঠী লতা মঙ্গেশকর

ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে কন্ঠশিল্পী নুর জাহানের অনুকরণ করতেন লতা। নুর জাহানের খুব ভক্ত ছিলেন তিনি। তবে ধীরে ধীরে নিজের গানে একটি নিজস্ব শৈলী নিয়ে আসেন কোকিলকণ্ঠী লতা মঙ্গেশকর। তবে তার ক্যারিয়ারের শুরুটা কেবল গান দিয়েই শুরু হয়নি। তিনি প্রায় আটটি হিন্দি ও মারাঠি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তবে তিনি লাইট-ক্যামেরার সামনে পরিচালক বা অন্য কারোর নির্দেশে কাজ করা পছন্দ করতেন না। পরে ১৯৪৯ সালে মহল চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার পর থেকে তিনি সবার নজরে চলে আসেন।

তবে প্রথম দিকে সময়ের বিবেচনায় তার কণ্ঠস্বর বেশি ‘সরু’ হওয়ায় বাঙালি সঙ্গীত পরিচালক শশধর মুখার্জি তাকে ফিরিয়ে দেন। এই লতাই পরে নিজের কণ্ঠে ১৯৬৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সামনে ভারত-চীন সীমান্তে চলা যুদ্ধের কিছুদিন পর এক অনুষ্ঠানে ‘এ মেরে ওয়াতান কে লোগো’ গানটি গান। এরপরই নেহেরু সেখানেই অশ্রুশিক্ত হয়ে পড়েন।

ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে বর্তমানে যে সেরা সঙ্গীত শিল্পীদের সম্মাননা দেয়া এর প্রচলনও হয় লতার হাত ধরে। ১৯৫৬ সালে লতার গাওয়া ‘রাসিক বালমা’ গানটি ফিল্মফেয়ারে সেরা গানের পুরস্কার পায়। লতাকে ফিল্মফেয়ারের অনুষ্ঠানে গানটি পরিবেশন করার জন্য ডাকা হয়। কিন্তু তখনো ফিল্মফেয়ারে গায়ক-গায়িকাদের জন্য আলাদা কোনো পুরস্কারের ব্যবস্থা না থাকার প্রতিবাদে লতা অনুষ্ঠানে গান করতে অস্বীকৃতি জানান। ৩ বছর পর ১৯৫৯ সালে ফিল্মফেয়ারে সেরা সঙ্গীত শিল্পীদের জন্য পুরস্কারের প্রচলন শুরু হয় এবং প্রথম বছরেই তিনি পুরস্কারটি লাভ করেন। তার কিছু বছর পর গায়ক ও গায়িকাদের জন্য পৃথক পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়।

আরও পড়ুন: ভালোবাসার কারণেই সিঁথিতে সিঁদুর পরেননি লতা মঙ্গেশকর

পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আজীবন বিয়ে করেননি লতা। নম্রভাষী লতা মঙ্গেশকরের বিরুদ্ধে একসময় পরকীয়ার অভিযোগ তোলেন গায়ক-অভিনেতা ভুপেন হাজারিকার স্ত্রী। বিচ্ছেদের পর তার স্ত্রী এক সাক্ষাৎকারে জানান, লতার সাথে ভুপেনের প্রেমের সম্পর্ক আছে, এমনকি তারা একসাথে রাত্রীযাপন করেছেন বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি। এনিয়ে লতা বেশ ক্ষুব্ধ হন। পরবর্তীতে রাজ সিং দুঙ্গাপুরের সাথে তার প্রায় একদশক ধরে সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসে।

নিজের লম্বা এই ক্যারিয়ারে বহুবার নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হন লতা। তবে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ঘটনাটি ঘটে ১৯৬২ সালে। ‘স্লো পয়জন’ প্রয়োগে কে বা কারা লতাকে হত্যা চেষ্টা করে। এতে মৃতপ্রায় লতার প্রাণরক্ষা পায় ১০দিন হাসপাতালে চিকিৎসার পর। সেবার পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে তার সময় লাগে তিনমাস। যদিও এর পেছনে কে ছিল তা এখনও রহস্য। তবে এ ঘটনার পর লতা রাঁধুনি কাউকে কিছু না বলে এবং নিজের বেতন না নিয়েই হঠাৎ উধাও হয়ে যায়।

লতার মৃত্যু একটি অপূরণীয় ক্ষতি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার মিলিয়ে লতার অর্জনের ঝুলিতে আছে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। তার এ প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply